ড. ইউনূস ইস্যুতে ১৬০ জনের খোলা চিঠি, নীতিজ্ঞান বিবর্জিত বললেন ঢাবি ভিসি 

ঢাবি
মানববন্ধনের একাংশ  © সংগৃৃহীত

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নোবেলজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের ১৬০ ব্যক্তির চিঠির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এই চিঠিকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। চিঠি প্রদানকারী এসব ব্যক্তিকে নীতিজ্ঞান বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

উপাচার্য বলেন, প্রতিটি সমাজেই কিছু মানুষ থাকেন যে মানুষগুলো নীতিজ্ঞান বিবর্জিত এবং তারা অনেক সময় নানাভাবে প্রলোভনের মুখে পড়ে অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়। আমার ধারণা, এই ব্যক্তিবর্গ যারা আন্তর্জাতিকভাবে ১৬০ জন বিবৃতি প্রদান করেছেন বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়াধীন বিষয় নিয়ে তারা নীতিজ্ঞান বিবর্জিত কিছু মানুষ। আমার ধারণা, নিঃসন্দেহে এই মানুষগুলো লবিস্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তাদেরকে হয়তোবা কোন গোষ্ঠী, কোন সম্প্রদায়, কোন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন অথবা কোন ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করেছেন। সে কারণেই আজকে তারা দুর্নীতির পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন; অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

আজ সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত মানববন্ধনে উপাচার্য এসব কথা বলেন। ড. ইউনূস ইস্যুতে ১৬০ বিশ্বনেতার দেয়া চিঠির প্রতিবাদে এই মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তবে এমনও কিছু মানুষ আছেন যাদের নিজেদের দেশ, দেশমাতৃকা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, গৌরব ও অর্জনের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা থাকে না। যে মানুষগুলোর নাম এখানে উচ্চারিত হচ্ছে, যাকে নিয়ে আবর্তন হচ্ছে তাদের কখনো আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ কিংবা অসাম্প্রদায়িক কোন অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করতে দেখবেন না। কারণ এই মানুষগুলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে পর্দার অন্তরালে থেকে নানা ধরনের পরিস্থিতির সুযোগে তারা স্বার্থ হাসিল করায় নিয়োজিত থাকে এবং এই স্বার্থ হাসিলের সুরক্ষা হিসেবে তারা আন্তর্জাতিকভাবে অন্য মানুষদের হায়ার (ভাড়া) করে থাকেন; লবিস্ট নিয়োগ করে থাকেন। আমার ধারণা, যারা এই দেশে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সেই মানুষগুলো, প্রতিষ্ঠান বা দল সুরক্ষা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগের জন্য কৌশল গ্রহণ করেছেন এবং এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে এটি আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর একটি হস্তক্ষেপ।

উপাচার্য আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ধরনের অন্যায় দাবি ও অন্যায় হস্তক্ষেপ দূর করেই সামনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন এবং এক্ষেত্রেও তাই ঘটবে। কেননা ইতোপূর্বেও যে সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র সংঘটিত হয়েছিল; সেই ষড়যন্ত্রেও কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই জড়িত ছিলেন। আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ করবো, এই ধরনের অপশক্তি যারা আমাদের আইনের শাসনকে ব্যাহত করার নানা অপপ্রয়াস গ্রহণ করে এবং যারা দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নিবে তাদের সে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইনের শাসনের সুউচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করে একটি সত্য ও সুন্দর দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করা খুবই জরুরি কাজ।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের বিচারব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য ড. ইউনূস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নোবেল বিজয়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবে যে বিবৃতি বা খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে সেটা যদি কেউ পড়ে থাকে তাহলে দেখবে এখানে বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে, বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া; যে চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা শ্রমিকদেরকে দেয়ার জন্য শ্রম আদালতে রায় হয়েছে। সাড়ে চারশো কোটি তিনি অলরেডি প্রদান করেছেন। ট্যাক্স ফাঁকির জন্য ১২ কোটি টাকা প্রদান করেছেন এবং এসব তিনি মেনেও নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তিনি ইউনূস সেন্টার থেকে বিবৃতি পাঠান। তিনি ব্যবহার করেন ওয়াশিংটন পোস্ট, বিদেশি সংবাদকর্মীদের সাথে তিনি কথা বলেন; বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করেন না। বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা কি অস্পর্শ হয়ে গেছে? তিনি কি এদেশের মানুষ, সংবাদকর্মীদের কাছে তার বক্তব্য থাকলে তা ব্যাখ্যা করতে পারেন না? কেন করছেন না তিনি? এই সমস্ত কারণে আমরা মনে করি ড. ইউনূস গোপন করতে চাচ্ছেন এবং গোপন করতে চাচ্ছেন বিধায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দিয়ে তিনি বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন ।

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দিয়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপরে চাপ প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন। একটি দেশের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অর্থই হলো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত আনা। আপনি কেন শহীদ মিনারে যান না? কেন স্মৃতিসৌধে যান না? কেন আপনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চান না? এগুলো কি দেশপ্রেমের অংশ নয়। আপনার কি দেশপ্রেম আছে? যদি আপনার দেশ প্রেম থাকতো তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এতগুলো মানুষকে দিয়ে আপনি বিজ্ঞাপন দিতেন না। আপনার কাছে যদি ম্যাটারিয়ালস থাকতো তাহলে তো সেখানে খবর হতো।অর্থ দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপানো ছাড়া আর কোন প্রক্রিয়ায় আমরা আপনাকে অগ্রসর হতে দেখিনি। আপনাকে বলবো বাংলাদেশে সুবিচারের ব্যবস্থা এখনো রয়েছে। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। আপনি এদেশের সুবিধা গ্রহণ করে বড় হয়েছেন। আপনি এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। 

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো: জিয়া রহমান,  ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, সাবেক প্রক্টর অধাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ, কবি জসীম উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ শাহীন খান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুর রহিম, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বিল্লাল হোসেন প্রমুখ।


মন্তব্য