২০ হাজার টাকা চুক্তিতে ট্রেনে আগুন দিতে গিয়ে হাতেনাতে আটক বিএনপি কর্মী
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৮ PM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৮ PM

রাজধানীর কমলাপুরে নারায়নগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়ার সময় আল আমিন (২৩) নামের একজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। রেল যাত্রীদের সহযোগিতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আল আমিন পেশায় বাস চালক। তিনি সক্রিয় বিএনপি কর্মী দাবি পুলিশের।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে কমলাপুরে ঢাকা জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার রাতে নারায়নগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা কমিউটার ট্রেনটি ছেড়ে এসে কমলাপুর স্টেশনের ৮ নম্বর প্লাটফর্মের ৯ নম্বর লাইনে এসে পৌঁছায়। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর ট্রেনের ২০৭৫ নম্বর বগিতে যাত্রী বেশে থাকা আল আমিন ও তার আরও তিনজনের সহযোগিতায় পেট্রোল ঢেলে বগির আটটি সিটের ওপর পেট্রোল ছিটিয়ে গ্যাস লাইটার দিয়ে কয়েকবার আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গ্যাস লাইটারে ঠিক মতো কাজ হয়নি। এরইমধ্যে ওই বগিতে ঢাকায় আসা এক যাত্রী নেমে যান। পরে কোনো একটি কারণে তিনি আবার উঠে আগুন লাগাতে দেখেন।
এরপর ওই যাত্রী চোর চোর চিৎকার করলে আল আমিন ও তার তিন সহযোগী পেট্রোল ভর্তি ব্যাগ ফেলে ট্রেন থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন প্লাটফর্মে থাকা যাত্রীদের সহায়তায় রেলওয়ে পুলিশ তাকে আটক করে।
পুলিশ সুপার আনোয়ার বলেন, আটক আল আমিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি পেশায় বাস চালকের সহকারী, মাঝে মাঝে নিজেও বাস চালান। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি এলাকায়। তার সঙ্গে থাকা তিনজনের মধ্যে অন্যতম ও দলনেতার নাম সোহাগ। তিনি একই বাসের চালক। এই সোহাগই আগুন দেয়ার জন্য আল আমিনের সঙ্গে ২০ হাজার টাকার চুক্তি করেন।
যে ভাবে আগুন দেয়ার চুক্তি:
রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার সুপার আরও বলেন, গতকাল দুপুরে আল আমিনকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে একটা কাজের কথা বলে নারায়ণগঞ্জের তার খালার বাসায় পাঠিয়ে দেন। বিকাল ৫টার দিকে ফোন করতে বলেন। আলামিন তার খালার নম্বর থেকে ফোন করলে সে রাত ১০টার দিকে চাষাড়া রেল স্টেশনে আসতে বলেন। আলামিন রেল স্টেশনে গেলে সেখানে সোহাগসহ তিনজনের সঙ্গে ট্রেনে ওঠেন। ওই সময় সোহাগের কাঁধে একটি কালো ব্যাগ ছিলো। পরে তারা চলন্ত ট্রেনে বসে আগুন দেয়ার পরিকল্পনা করেন। যাত্রীরা নেমে গেলে আলামিন পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরাবে বলে পরিকল্পনা করা হয়।
বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর আসার পর সকল যাত্রী নেমে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়েকবার আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন আল আমিন। কিন্তু গ্যাস লাইটার ঠিক মতো কাজ না করায় আগুন ধরাতে পারেনি। এরইমধ্যে মধ্যে এক যাত্রী চলে আসায় তারা পালানোর চেষ্টা করে।
গ্রেপ্তার আল আমিন পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। পাশাপাশি বাস দিয়ে নেতা-কর্মীদের আনা-নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন। সোহাগও একইভাবে কাজ করতেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
নাশকতায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষদের ব্যবহার বাড়ছে। তাই কমলাপুরে থাকা ভাসমান মানুষদের ওপর নজরদারির আছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আনোয়ার বলেন, আমাদের রেল স্টেশন কেন্দ্রিক কিছু মানুষ থাকে। যারা বাবা-মা ও পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমরা চেষ্টা করি ভাসমান শিশু কিশোরদের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে। পাশাপাশি যাদের পরিবার পাওয়া যায় না তাদের বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে ভালো একটি নিরাপদ আবাসস্থল করে দেয়ার চেষ্টা করি। কাউন্সিল করা হয়, কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। বিশেষ করে হরতাল অবরোধের সময়ে এই সকল শিশু কিশোরদের সঙ্গে কথা বলি। তাদেরকে নজরে রাখা হয় যেনো তারা বিপদগামী না হয়। বা কেউ টাকার বিনিময়ে হরতাল- অবরোধে নাশকতায় ব্যবহার না করতে পারে। আমরা ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশ তৎপর আছি।
পুলিশ সুপার আনোয়ার বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী নাশকতাকারীকে গ্রেপ্তারের সাহায্য করায় একজন যাত্রীকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার করা হবে। তবে ওই যাত্রীর নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি রেলওয়ে পুলিশ।