বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খুন, আটক যুবদলের কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা

বগুড়া
  © সংগৃহীত

বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটলো দুটি হত্যাকাণ্ড। প্রথমে, প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। পরে আহত অবস্থায় আটককৃত এক হামলাকারীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এদিকে এ ঘটনার ভিডিও ধারণের সময় পিটিয়ে আহত করা হয় ৫ সাংবাদিককে।

গতকাল সোমবার রাতে সদরের গোকুল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নিজ অফিসে বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে লেদো নামের এক যুবককে হাসপাতালে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার রাত অনুমানিক ৯টায় একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলযোগে এসে মিজানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরিভাবে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মিজান গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে।

এদিকে ঘাতক সন্দেহে রাতেই গোকুল এলাকায় স্থানীয় লোকজন লেদোকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে মিজানের অফিসে আটক করে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত লেদোকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ভর্তির আগেই সেখানেও উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা লেদোকে ফের গণপিটুনি দিলে রাত আনুমানিক ১১টায় তিনি মারা যান।

লেদোর মৃত্যুর বিষয়টি বগুড়া মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশসহ যৌথবাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজানের মৃত্যুর খবরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ছুটে যান বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ এ হত্যা প্রসঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘হত্যাকান্ডের তদন্তের বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছেন। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

এদিকে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে উত্তেজিত জনতা সাংবাদিকদের উপরও চড়াও হন। এতে ৫ সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শজিমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আনার পর মিজানের পক্ষের লোকজন আহত ব্যক্তিকে লেদু নামে শনাক্ত করেন। পরে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জরুরি বিভাগে ঢুকে পড়েন। সেখানে তারা আহত লেদুকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। একই সঙ্গে জরুরি বিভাগে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় জরুরি বিভাগে সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজনসহ কয়েকজন সাংবাদিক। লেদুকে মারধরের ভিডিও ধারণ করায় তাদের ওপর হামলা চালায় মিজানের পক্ষের লোকজন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা শজিমেক হাসপাতালে উপস্থিত হন।

সাংবাদিক মেহেরুল সুজন বলেন, ‘আমি আগে থেকেই মোবাইলে ভিডিও করছিলাম। উত্তেজিত লোকজন সব ভেঙে জরুরি বিভাগের ভেতর ঢুকে পড়েন। তারা এসেই আহত লেদুর ওপর হামলে পড়ে। সে যখন মারা যায় তখন তাদের নজর পড়ে আমার মোবাইলের দিকে। এরপর আমার ওপর হামলা চালায় তারা। আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।’