এবারও সমাবেশ নিয়ে মুখোমুখি তাবলিগ জামাত

তাবলীগ
  © ফাইল ছবি

আগামী ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দিয়েছে তাবলিগ জামাত-সংশ্লিষ্ট দুটি পক্ষ। এর মাধ্যমে বেশ কয়েকছর শান্ত থাকার পর তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষ আবারও মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াচ্ছে।

একাধিক দায়িত্বশীল আলেম জানান, আগামী ৫ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘উলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ’ এর ব্যানারে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে তাবলিগের সাদবিরোধী অংশ। ‘দাওয়াত ও তাবলীগ, মাদারেসে কওমিয়া এবং দ্বীনের হেফজতের লক্ষ্যে’ অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশের আয়োজনে রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সংশ্লিষ্টরা। প্রকাশ্যে না থাকলেও জেলাভিত্তিক ও বিভিন্ন পয়েন্টের মার্কাজ মসজিদে সমাবেশ বাস্তবায়নে কাজ করছেন জুবায়েরপন্থী তাবলীগের সদস্যরা

এদিকে ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’ মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে বাংলাদেশের উলামা-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

রোববার (০৩ নভেম্বর) মুফতি মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখা ইসলাম ও দেশের স্বার্থে অতি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি মহান আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এতে দুনিয়া ও আখিরাত- উভয় জাহানেই অপূরণীয় ক্ষতি। তবে অত্যন্ত আনন্দের বিষয় এই, বাংলাদেশের উলামা-মাশায়েখগণ মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ'-এর সাথীরা মন থেকে তাদের এই ঐক্য প্রচেষ্টার সফলতা কামনা করি। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এই ঐক্য প্রচেষ্টার মহৎ উদ্যোগে আমরা সবসময় উলামা হজরতগণের সহযাত্রী হিসেবে আছি এবং থাকব।

এতে বলা হয়, দুয়া করি- মহান আল্লাহপাক দুনিয়া ও আখিরাতে উলামায়েকেরামের শান ও মান বৃদ্ধি করুন। নিঃসন্দেহে উলামা-মাশায়েখগণ আমাদের সকলের পথপ্রদর্শক, তাবলিগের সাথীদের মাথার তাজ। আমরা ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’র সাথীগণ ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পক্ষ থেকে উলামা-মাশায়েখগণের সুচিন্তিত পদক্ষেপগুলোর জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ‘জুলাই বিপ্লব’র পর ইসলামী ঘরাণার বিভিন্ন অঙ্গণ থেকে এক কালিমারভিত্তিতে যে ঐক্যের আহ্বান করা হয়েছে, সেই অসামান্য পদক্ষেপের জন্য দেশ ও জাতি ইসলামি নবজাগরণের প্রেরণা পেয়েছে। এর ফলে উম্মতের মধ্যে আবারও ঐক্য ও সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, যখনই উলামায়েকেরাম ঐক্য তৈরির পথে এগিয়েছেন, তখনই এই প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে ধর্মীয় বেশে বিভিন্ন কুচক্রী মহল বিভিন্ন রকম অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তৃতীয় পক্ষ’- যারা তাবলিগের মূলধারার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে, তারা চায় এই দেশের সকল ঘরাণার ইসলামি শক্তি যেন ভাই- ভাই হয়ে ঐক্যের বন্ধন গড়তে না পারে। তারা মিথ্যাচার করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ঝগড়া, অনৈক্য এবং সংঘাত উষ্কে দিতে চায়। আমরা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও তাবলিগের সকল সাথী আশা করছি, সচেতন উলামা-মাশায়েখগণ তৃতীয় কোনো পক্ষের উস্কানিতে পা দিয়ে উম্মাহর মাঝে বিভক্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আমরা আশা করি, তারা নবীর ওয়ারিস তথা ‘ওরাসাতে নবুওয়্যাতের’ দায়িত্ববোধ থেকে সকল মত ও পথের মুসলমানকে সঙ্গে নিয়ে উত্তম পন্থায় উম্মতের সংশোধনের পথ অবলম্বন করবেন।

এতে আরও বলা হয়, আমরা দেশের শ্রদ্ধেয় উলামায়েকেরামকে অবগত করতে চাই যে, আগামী ৫ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উলামা-মাশায়েখদের ব্যানারে যে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেখানে যদি তাবলিগ বিষয়ে কোনো পক্ষাবলম্বন করা হয় বা পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য দেওয়া হয়, তবে তা তাবলিগের মেহনতের ময়দানে কোন্দলকে নতুনভাবে উষ্কে দিতে পারে। ফলে মসজিদে-মসজিদে, পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় পারস্পরিক দূরত্ব ও মতানৈক্য আরও বৃদ্ধি পাবে- যা কারও জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। আমরা উলামা-মাশায়েখগণের ঐক্যের সঙ্গে সবসময়ই সহযাত্রী হিসাবে ছিলাম ও আছি। দেশজুড়ে ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’-এর সব সাথী ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লি উলামা-মাশায়েখগণের সকল দ্বীনি আন্দোলন ও খিদমতে নিজেদের একান্ত সহযোগী ও খাদেম মনে করেন। তাই, দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সম্মানিত উলামা-মাশায়েখগণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান- তাবলিগের বিষয়টিকে রাজপথে না নিয়ে আপনারা ঘরোয়াভাবে সমাধানের চেষ্টা করুন। ‘আমিরুল হিন্দ' মাওলানা আরশাদ মাদানী (দা. বা.) ও শায়খুল ইসলাম মুফতি ত্বকী উসমানী (দা. বা.)-এর দেওয়া রাহবারির (নির্দেশনা) আলোকে কোনো এক পক্ষকে হক ও অপর পক্ষকে বাতিল না বলে সবার জন্য সমানভাবে দাওয়াত ও দ্বীনের মেহনতের পরিবেশ তৈরি করে দিন। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, দেশজুড়ে ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’র অগুণতি অনুসারী উলামা-মাশায়েখগণের এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে সাদরে গ্রহণ করবেন এবং যে কোনো যৌক্তিক পরামর্শকে তারা গণীমত হিসেবে মেনে নেবেন ইনশা-আল্লাহ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উলামা-মাশায়েখগণ; আপনাদের খোদাপ্রদত্ত ইলম, হিলম ও মহানুভবতার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে আমরা ‘তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ’র সাথী ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলল্লিগণ আশা করছি যে, আপনারা আগামী ৫ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা থেকে বিরত থাকবেন। আর যদি অংশগ্রহণ করেনও, তাহলে তাবলিগ ইস্যুটাকে পরিহার করবেন।