শ্রমিকদল নেতা

সুপারিশ করা কর্মকর্তাকে পদায়ন না করায় দুই কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

যুবদল
  © সংগৃহীত

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি ও লুটপাট, তদবির ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এবার সুপারিশ করা কর্মকর্তাকে পদায়ন না করায় নবনিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা দিয়েছেন বরিশাল মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম। তারা যেন কক্ষে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সহযোগীদের নিয়ে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করেন তিনি।

গতকাল রবিবার (২ মার্চ) দুপুরে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এই ঘটনা ঘটে। শ্রমিক দল নেতা শহীদুল ইসলাম শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সংঘের সভাপতি।

জানা গেছে, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ড. মো. কামরুজ্জামান কামাল ও উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে হাসান মাহমুদকে পদায়ন করে মন্ত্রণালয়। আদেশ মোতাবেক রোববার বোর্ডে যোগ দিতে আসেন তারা। খবর পেয়ে বোর্ডে তার অনুসারী কর্মচারীদের নিয়ে বিক্ষোভসহকারে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন শহীদুল ইসলাম।

শহীদুল ইসলাম বলেন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামরুজ্জামান কামাল সরাসরি ফ্যাসিবাদের দোসর। কামরুজ্জামান কামাল বরিশালের সাবেক মেয়র ও মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর করে দেওয়া বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সদস্য ছিলেন। ওই কমিটি শিক্ষকদের ভোট ব্যতীত হয়। সাদিক কলেজ অধ্যক্ষকে তার বাসভবনে নিয়ে অফিস আদেশের মাধ্যমে কমিটি করেন। আল আমিন সরোয়ারকে ওই কমিটির সম্পাদক করা হয়েছিল। এ ছাড়া আমরা জানতে পেরেছি যশোর থেকে আসা উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক হাসান মাহমুদ আওয়ামীপন্থি স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতির নেতা ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্টের দোসরদের বোর্ডে ঠাঁই দেওয়া হবে না।

তবে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা যেন যোগদান করতে না পারি সেজন্য কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে বোর্ড চেয়ারম্যান স্যার তালা খুলে যোগদান করিয়েছেন।

উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।

বোর্ডের কর্মচারীরা জানান, বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা এবং নবনিযুক্তদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার খবর পেয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বোর্ডে যান এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যোগদান হতে আসা দুই কর্মকর্তাকে যোগদানে সহায়তা করেন।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষা বোর্ডে যাদের বদলি অথবা নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের সবাইকে মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের পর চূড়ান্ত করা হয়। তারপরও অভিযোগ উঠেছে দুই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর, যা নিয়ে কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

চেয়ারম্যান বলেন, দুটি পদে কর্মচারীরা পদায়ন পেতে যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বোর্ডের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদে প্রেষণ থেকে আসাদের পদায়ন না হলে বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তারপরও গত কয়েক দিন ধরে যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে পদায়নকৃত দুইজনের বিরোধী পক্ষরা নানা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। আসলে বোর্ডের কর্মচারীদের তদবির না মানলেই যাকে-তাকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, শ্রমিক দল নেতা শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও বোর্ড চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে। একটি বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে তার সুপারিশ করা ব্যক্তিকে নিযুক্ত না করায় সেই ঘটনা ঘটান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা ইমরান সিকদারের বড় ভাই শ্রমিক দল নেতা শহীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের আমলে ছোট ভাইয়ের প্রভাব বিস্তার করতেন বোর্ডে। আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন নিজ দলের প্রভাব বিস্তার করছেন।