পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার ৩; কেউই এজহারভুক্ত আসামি নয়

পারভেজ
  © ফাইল ছবি

রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৩) হত্যার ঘটনায় তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)।

আজ রবিবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা কেউ মামলার এজাহারনামীয় আসামি নন।

তবে পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে ঘটনার সময় তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ ও মেসেজ পাঠানোর মাধ্যমে ঘটনায় ২নং আসামিকে তারাই ডেকে এনেছেন।

বনানী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই তিনজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন আসামি। এর মধ্যে আল কামাল শেখ ওরফে কামাল থাকেন বিটিসিএল কলোনীতে। তার বাড়ি খুলনা তেরখাদার বিলদুড়িয়ার শেখপাড়ায়। আলভী হোসেন জুনায়েদ থাকেন বনানী মসজিদ গলিতে। তার বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুরে (বালুর পুকুরপাড়া)। আর আল আমিন সানি থাকেন মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকায়। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী।

পারভেজ হত্যা মামলার তিন আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, ঘটনার সাক্ষী ও সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণে ঘটনাস্থলে এই তিন সন্দেহভাজন আসামিকে উপস্থিত দেখা গেছে এবং তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়।

গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রোববার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি বলেন, উল্লিখিত আসামিরা মামলার এজাহারনামীয় ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য অজ্ঞাত পরিচয়ের পলাতক আসামিদের চেনে এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৪) মিডটার্ম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে পরীক্ষা শেষে তিনি বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র‌্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের একটি পুরি-শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন, হাসাহাসিও চলছিল।

তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী। পারভেজ তাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছেন কি না—এমন সন্দেহ থেকে সেখানে হাজির হন মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০) ও মাহাথির হাসান (২০) নামের তিন যুবক। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়, যার কিছু অংশ সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়ে।

ঘটনার জের ধরে বিষয়টি পৌঁছে যায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে। শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পরপরই গেটের সামনে পারভেজের ওপর হামলা চালানো হয়। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় ওই রাতেই নিহতের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাইরের লোকসহ মোট আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিরা হলেন—মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস, মো. মাহাথির হাসান, সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজি, রিফাত, আলী ও ফাহিম। এ ছাড়া আরও ২৫ থেকে ৩০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।