ইসলামে শীতকালের ইবাদত

ইসলাম
  © প্রতীকী ছবি

মুমিন বান্দা যারা আল্লাহর বিধান মেনে, আল্লাহর ইবাদত করবে তাদের জন্য রয়েছে অনেক পুরস্কার। কারণ মহান আল্লাহ মানব ও জিন জাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করেছেন। মানব ও জিন জাতি শুধু তাঁরই দাসত্ব করবে। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই এ বিধান চলে আসছে। কিয়ামত পর্যন্ত এ নির্দেশনা চালু থাকবে। সুরা আয-যারিয়াতের ৫৬ আয়াতে এরশাদ হয়েছে- 'আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।'

ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে শীতকাল অন্যতম। এ সময়ে সাধারণত দিন ছোট এবং রাত বড় থাকে বিধায় রাতে যেমন তাহাজ্জুদের সুযোগ ও সময় থাকে, তেমনি দিনের বেলায় রোজা রাখাও সহজ হয়। আমের ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত নবী করিম (সা.) বলেছেন, শীতল গনিমত হলো শীতকালে রোজা (তিরমিজি, ৮০২)। শীতের সময় ঠান্ডার মধ্যে বান্দা যখন আল্লাহর ইবাদতের জন্য অজু করে, এরও বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যদিও আল্লাহর দেওয়া বিধান বান্দাকে সর্বাবস্থায় এবং সব ঋতুতেই মানতে হবে। যারা কোরআনের বিধান এবং রাসুলে পাক (সা.)-এর আদর্শ বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ ও আন্তরিক, তারাই আল্লাহতায়ালার দরবারে মুমিন হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় মুমিন বান্দাদের জন্য পরকালীন জীবনে চিরশান্তির আবাস জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন। অসংখ্য ও অগণিত নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত। সুসজ্জিত ও সুরক্ষিতভাবে সাজানো রয়েছে চিরশান্তির আবাসভূমি জান্নাত।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ কোনোদিন দেখেনি; কোনো কান তা শোনেনি; কোনো হৃদয় তা কল্পনা করেনি (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের নেয়ামতগুলোর অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। সুরা আল কাহাফের ৩১ আয়াতে এরশাদ হয়েছে- 'তাদের জন্য রয়েছে চিরবসন্তের জান্নাত, যার পাদদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদী। সেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকনে সজ্জিত করা হবে, সূক্ষ্ণ ও পুরু রেশম ও কিংখাবের সবুজ বস্ত্র পরিধান করবে এবং উপবেশন করবে উঁচু আসনে বালিশে হেলান দিয়ে, চমৎকার পুরস্কার এবং সর্বোত্তম আবাস!'

অন্যত্র সুরা আন নাবার ৩১-৩৬ আয়াতে এরশাদ হয়েছে- 'অবশ্য মুত্তাকিদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগবাগিচা, আঙুর, নবযৌবনা সমবয়সী তরুণীরা এবং উচ্ছ্বসিত পানপাত্র। সেখানে তারা শুনবে না কোনো বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার রয়েছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে।'

এ প্রসঙ্গে রাসুলে করিম (সা.)-এর একটি হাদিস- হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একদিন প্রিয় মহানবী (সা.)-এর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), জান্নাতের বিবরণ দান করুন। তখনই তিনি বর্ণনা করেন, 'জান্নাতের একটি ইট স্বর্ণের, আরেকটি রৌপ্যের; কঙ্কর হবে মুক্তার; জাফরানের মাটি; কস্তূরির গারা। যে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে সর্বদা সুখ-শান্তি ও আনন্দ-উল্লাসে মাতোয়ারা থাকবে।

বেহেশতের অধিবাসী কেউ কখনও চিন্তিত হবে না। তারা কোনোদিন মৃত্যুবরণ করবে না। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ কখনও পুরোনো হবে না। তাদের জীবনে কোনোদিন বৃদ্ধকাল আসবে না। তারা থাকবে চিরযৌবনা। জান্নাতে দুধ, পানি, মধুর নহর প্রবাহিত থাকবে। বেহেশতবাসী যা চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তা পাবে।'

মুমিনের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মৃত্যুর পর জান্নাত লাভের জন্য বান্দাকে শীতের আরাম ত্যাগ করে কষ্ট করে হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ অন্য বিধিবিধান মেনে চলতে সচেষ্ট হতে হবে। ফজরের সময় মুমিন বান্দাকে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। শীতকাল হলেও মুয়াজ্জিন যখন 'হাইয়া আলাসসালাহ' বলবে, তখন নামাজের জন্য তৈরি হওয়াই ইমানের দাবি।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ঋতুতে সর্বাবস্থায় পবিত্র কোরআন ও রাসুলে পাক (সা).-এর সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণ করে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন।