বন্ধ করা হলো পবিত্র জমজম কূপের পানি বিক্রি

জমজম পানি
  © ফাইল ফটো

ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে বোতলজাত ‘জমজমের পানি’ বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই পানি বিক্রির কোন বৈধতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পবিত্র জমজম কূপের পানি খোলা বাজারে বিক্রয়–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এই পানি বিক্রির আইনগত ও নৈতিক বৈধতা নিয়ে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বোতলজাত করে জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিদপ্তর গত রবিবার অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ৫ লিটার ও ২৫০ মিলিলিটারের বোতলে জমজমের পানি বিক্রির প্রমাণ পাওয়ার পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁরা এই পানি হাজি কিংবা হজ পরিচালনাকারী বিভিন্ন এজেন্সি থেকে পেয়ে থাকেন।

সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি সংবেদনশীল। এটা আমাদের সামনে আসার পরে আমরা দ্রুত সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে সাময়িকভাবে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে পবিত্র জমজমের পানি বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কারণ, এমনকি সৌদি আরবেও এই পানি বিক্রি হয় এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই।’

সফিকুজ্জামান আরও বলেন, যতটুকু জানা গেছে, ‘জমজমের পানি বিক্রির আইনি কোন বৈধতা নেই। এরপরেও আমরা যাচাই-বাছাই করতে চাই। এজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ওমরাহ পালন করে এসেছি। সেখান থেকে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে প্রতিজনকে একটি পাঁচ লিটারের বোতল নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। এর বাইরে পানি ছোট বোতলে করে হাতব্যাগে নিয়ে আসা যায় এমন কিছু দেখিনি। সুতরাং দেশের বাজারে কোনভাবেই ছোট বোতলজাত পানি পাওয়ার কথা নয়।’

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমার এটাও মনে হয় না কোন হাজি সৌদি থেকে জমজমের পানি নিয়ে আসবেন বায়তুল মোকাররমের এই মার্কেটে বিক্রি করার জন্য। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সৌদি সরকার যদি এটা জানে, তাহলে আমাদের দেশের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশিদের জন্য জমজমের পানি নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

পুরো বিষয়টি নিয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদেরকে আগামী দুই দিনের মধ্যে তাঁদের মতামত ভোক্তা অধিদপ্তরে জানাতে বলা হয়েছে। সরকারি সংস্থাটির পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে যে দেশের অন্য কোন বাজারে জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে কি-না, তা তদারকি করা হবে।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বা অনলাইনে এই পানি বিক্রি করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারি অন্যান্য সংস্থার সাহায্য নেবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী সুলতান কবিরাজ বলেন, ‘অনেক সময় হাজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মোয়াল্লেমরা ফেলে যাওয়া বোতলগুলো বায়তুল মোকাররমে নিয়ে আসেন। তখন আমরা এটা কিনে বিক্রি করে থাকি। তবে এই পানি তাঁদের মার্কেট ছাড়া অন্য কোথাও চলে না।’

বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী গ্রুপের অফিস ব্যবস্থাপক আহমেদুল হক বলেন, ‘হাজিদের মনোভাব এমন থাকার কথা নয় যে তাঁরা এই পানি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসবেন। বিষয়টিতে আমাদেরও সেভাবে নজর ছিল না। আশা করি আরও আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ক্যাবের প্রতিনিধি ও ভোক্তা কন্ঠের সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি জমজমের পানি বিক্রি হয় না। এটা বিক্রি করা সেখানেও অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। সব হাজিকে শুধু পাঁচ লিটারের বোতল নিয়ে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। সুতরাং, নতুন করে বোতলজাত করে যে পানি বিক্রি হচ্ছে, তা আসলেই জমজমের পানি কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’

মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো