হজে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে ৯০ বছরের বৃদ্ধ রাস্তায় রাস্তায় পান বিক্রি করছেন

হজ
  © সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে গত ৩ মাস ধরে বালতির মধ্যে হরেক রকমের মসলা দিয়ে মিষ্টি পান বিক্রি করছেন ৯০ বছরের ইমান আলী। এক হাতে পাসপোর্টের কপি অন্য হাতে পানের বালতি নিয়ে সৈকতের ধারে ঘুরে পান বিক্রি করেন তিনি।

পাসপোর্ট হাতে নিয়ে পান বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধ বলেন, শেষ বয়সে পবিত্র মক্কা শরীফ নিজের চোখে দেখতে চাই। জীবনে একবার হজে যেতে চাই।

ইমান আলীর বাড়ি পটুয়াখালী মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের বিড়াজোড়া গ্রামে। পরিবারে কাঠমিস্ত্রীর পেশায় থাকা দুই ছেলে থাকলেও সংসার টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই বাবার ভরণপোষণ চালালেও স্বপ্ন পূরণ করতে অক্ষম তার দুই সন্তান। এখন নিজে পান বিক্রি করে সেই অর্থে হজে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ইমান আলী।

তিনি বলেন, আমি পান বিক্রি করে হলেও হজ করতে যাব। নিজের চোখে প্রাণ ভরে কাবা শরীফ দেখব। আমার নবীর রওজা মোবারক দেখব। সেই আশা বুকে নিয়ে গত তিনমাস ধরে পান বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছি। এই টাকা সংসার খরচে দেই না। আল্লাহ যেন আমার মনের এই আশা পূরণ করেন, আপনারা দোয়া করবেন আমার জন্য।

নিজের হতদরিদ্র অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ইমান আলী বলেন, আমি পেশায় কাঠমিস্ত্রী ছিলাম। নিজের জমিটুকু ছাড়া কিছুই নেই আমার। ওই জমিটুকুতে আমার দুই ছেলে ঘর তৈরি করে থাকে। আমি গত তিনমাস ধরে কুয়াকাটা মসজিদে থাকি। হজে যাব বলে সবার কাছে সাহায্য চেয়েছি। পরে জানতে পারি এভাবে হজ হবে না। ব্যবসা করার পরামর্শ দেয় সবাই। সেই পরামর্শে মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে মালামাল কিনে পান বিক্রি শুরু করি। কুয়াকাটায় আগত পর্যটক এবং স্থানীয় লোকজন আমার পান খেয়ে আমাকে বেশি করে টাকা দেয়। আর আমি সেই টাকা জমিয়ে রাখি।

শুধু পান বিক্রি করে হজের টাকা না জমলে নিজের জমিটুকু বিক্রি করে দেবেন বলে জানিয়েছেন এই বৃদ্ধ। তিনি বলেন, আমি কাবা ঘর দেখতে চাই। এটা আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে। প্রয়োজনে আমার জমিটুকু বিক্রি করে দেব। তবে যদি সমাজের কোনো বিত্তবান মানুষ আমাকে সহযোগিতা করত তাহলে আমার জমিটুকু বিক্রি করতে হতো না।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, বেশ কয়েকদিন হলো হজ করবে বলে পান বিক্রি করতে নেমেছে। পরে জানতে পারলাম তার ছেলেদের ইনকামে তার ভরণপোষণ চলে কিন্তু তাদের হজ করানোর সামর্থ্য না থাকায় তিনি এই বয়সে পান বিক্রি করছেন। যদি কারো পক্ষে সম্ভব হয় তাকে হজের ব্যবস্থা করে শেষ বয়সের স্বপ্ন পূরণ করে দেন তাহলে তিনি অনেক খুশি হবে। তবে তিনি শারীরিকভাবেও সুস্থ না। কারণ সে সোজা হয়ে হাঁটতেও পারে না।