দেশের সর্ববৃহৎ ও ১৯৬তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ

ঈদ
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান  © সংগৃৃহীত

দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। জেলা শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও সকাল ১০টায় ১৯৬তম ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদউদ্দিন মাসউদ। তার বিকল্প হিসেবে শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সোয়েবকে নামজা পড়ানোর জন্য মনোনীত করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শোলাকিয়া ময়দানটি প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো। এখানে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।

বিশাল এ মাঠে নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নামাজ শুরুর সংকেত হিসেবে গুলি ছুড়ে আওয়াজ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রেওয়াজ অনুযায়ী ঈদের জামাত শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি করে শর্টগানের গুলি ছোড়া হয়। জেলা প্রশাসন ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ইতোমধ্যে জামাত আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় এই ঈদ জামাতকে ঘিরে এবারও নিরাপত্তাব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাজানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানান।

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, এবারও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন ঈদগাহ মাঠ। এ আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না তারা। তাই সব কিছু খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।  

মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়াল রঙ করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার হয়েছে অজুখানা ও টয়লেট। বিদ্যুতের লাইন টানা ও সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে শোভাবর্ধনের কাজও চলছে মাঠ ও শহরজুড়ে। সব মিলিয়ে ঈদের জামাত ঘিরে শোলাকিয়ায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।  

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে,  দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আরা নিরাপত্তার স্বার্থে শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে শুধু জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। ছাতা, ব্যাগ, লাঠি বা লাইটার জাতীয় কিছু মাঠে না নিয়ে যেতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ জামাত আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এ কর্মকর্তা।

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো উন্নত ও কঠোর করা হয়েছে। ঈদের দিন পুরো মাঠ ঘিরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। প্রত্যেক মুসল্লি বেশ কয়েকবার তল্লাশির মুখোমুখি হবেন। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ।  

নিরাপত্তাব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ  বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এবার অনেক বেশি লোক হবে শোলাকিয়ায়। তাই সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুরো আয়োজনকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।  

তিনি জানিয়েছেন, শোলাকিয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো হুমকির খবর তাদের কাছে নেই। তার পরও পুলিশ সব কিছুর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।    

জানা গেছে, নামাজের সময় প্রায় ১৪০০ পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র‍্যাব সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও  আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন থাকবেন। সাদা পোশাকে নজরদারি করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ মেডিক্যাল টিম, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম তৈরি থাকবে, পুরো মাঠ বেশ কয়েকবার মাইন ডিটেক্টর দিয়ে সুইপিং করা হবে, ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল টিম আসবে। এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশপথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। নিরাপত্তাব্যবস্থায় বিরক্ত না হয়ে সবাইকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।  


মন্তব্য