ইমামের বিদায়ে কাঁদল গ্রামবাসী, ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়

ইমাম
  © ফাইল ছবি

১৯৯০ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কাপাশপারা গ্রামের বাইতূল নূর জামে মসজিদে ইমামতি শুরু করেন হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ। ৩৫ বছর ইমামতির পর ৭৫ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন তিনি। তাই বিদায়বেলায় মুসল্লিরা তাকে ঘোড়ার গাড়িতে করে রাজকীয় বিদায় দিয়েছেন। তার বিদায়ে গ্রামে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) জুমআর নামাজ শেষে ইমাম ওয়াজউদ্দিন শেখকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রথমে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এছাড়াও তার হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা ও নানা উপহারসামগ্রী। পরে বিভিন্ন রঙের বেলুনে সাজানো সুসজ্জিত একটি ঘোড়ার গাড়িতে উঠিয়ে ওয়াজউদ্দিন শেখকে শতাধিক মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি পৌঁছে দেন গ্রামের যুবকেরা।

হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের উপসী গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিন শেখের ছেলে। তার ছয় মেয়ে এক ছেলে।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ দীর্ঘ ৩৫ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন তিনি কাপাশপাড়া বাইতূল নূর জামে মসজিদে ইমামতি শুরু করেন তখন মসজিদটি ছিল ছোট একটি টিনের ছাউনি বেষ্টিত। তখন গ্রামবাসী তাকে বছরে ২২ মণ ধান দিতেন। পরে মাসে অল্প বেতনে তিনি ইমামতি চালিয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ইমামতি শেষে বার্ধক্যের কারণে আজ তিনি অবসর নিলেন। 

এলাকার আল-আমিন ওঝা, মুয়াজ্জেম চৌকিদার, সোহাগ চৌকিদার, শরীফ সরদার বলেন, তিনি খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তার পিছনে আমরা নামাজ পড়েছি। তার বিদায়ে আমাদের চোখে পানি এসে গেছে। আমরা এলাকাবাসী তাকে যেমন ভালোবেসেছি, তিনিও আমাদের ভালোবাসতেন।

মসজিদের সভাপতি রাশেদুজ্জামান চপল খান বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। কেননা আমরা আমাদের আত্মার আত্মীয়কে বিদায় দিলাম। যিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর আমাদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় আলোকিত করেছে। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুক, ভালো রাখুন এটাই আমাদের কামনা।

হাফেজ ওয়াজউদ্দিন শেখ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি যখন মসজিদটির ইমামতির দায়িত্ব নেই তখন জানালা কপাট ছাড়া ছোট একটি টিনের ঘর ছিলো। আমি সামান্য একটি মাদুর বিছিয়ে থাকতাম। উঁই পোকায় বিছানা খেয়ে ফেলতো। তবে আমার একটাই চিন্তা ছিলো কীভাবে এলাকার মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদটিকে সুন্দর করা যায়। এখন মসজিদটি সুসজ্জিত। বিদায়বেলায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। 

বিঝারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলী আহমদ কাজী বলেন, একজন ইমাম সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। তার এমন সম্মান ও রাজকীয়ভাবে বিদায় দিয়ে খুবই প্রশংসনীয় কাজ করেছেন এলাকাবাসী।