আজ পবিত্র শবে মেরাজ
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৪ AM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৪ AM

আজ বৃহস্পতিবার, পবিত্র শবে মেরাজ। ইসলাম ধর্মে বছরে যে কয়টি রাত ফজিলতপূর্ণ এর একটি শবে মেরাজ। ২৬ রজব এই রাতটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। সে হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতই পবিত্র শবে মেরাজ। মুসলিমরা রাতটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালন করবেন।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত সফরকে ‘ইসরা’ এবং মসজিদুল আকসা থেকে সাত আসমান পেরিয়ে আরশে আজিম সফরকে ‘মিরাজ’ বলা হয়। মহানবি (সা.) নবুওয়াতের দশম বছর ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ রজব দিবাগত রাতে আল্লাহর সান্নিধ্যে মিরাজ গমন করেন। পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাইল ও সুরা নজমের আয়াতে, তাফসিরে এবং সব হাদিস গ্রন্থে মিরাজের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
৬২০ খ্রিস্টাব্দ হজরত মুহাম্মদের (সা.)-এর জন্য দুঃখ ও শোকের বছর ছিল। এ সময় তিনি তার কঠিন সময়ের দুজন প্রিয় ব্যক্তি স্ত্রী খাদিজা (রা.) এবং চাচা আবু তালেবকে হারিয়েছেন। তা ছাড়া ইসলামের দাওয়াত নিয়ে তায়েফ গেলে সেখান থেকেও আশাহত হয়ে ফেরেন। এরপর মহান আল্লাহ ইসরা ও মেরাজের মাধ্যমে প্রিয় রাসুলকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেন।
এই রাতে প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিদার লাভ করেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে দুনিয়ায় ফিরে আসেন।
শবে মেরাজের ফজিলত ও ইবাদাত
শবে বরাতের নফল নামাজ ও ইবাদত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, এ রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেন না, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।
শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম: দুই রাকাতের নিয়তে কমপক্ষে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হয়। আছাড় ও আপনি বিভিন্ন নফল ইবাদাতসহ আর বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এশার নামাজ আদায় করারা সময় তিন রাকাত বিতির নামাজ আদায় যাবে না। এই তিন রাকাত নামাজ আদায় করবেন সকল নফল নামাজের পর। শবে মেরাজের নিয়ত অন্যান্য নফল নামাজের মতই এই নামাজের নিয়ত করবেন। উচ্চারণঃ নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহে তাআলা রাকআতায় ছালাতি লাইলাতিল মেরাজ মুতাওইয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু একবার। যদি আপনি মনে করেন এটি মুখস্ত করতে সমস্যা বা মনে থাকে না। তাহলে এই নিয়ত আপনি বাংলায় ও করতে পারেন আপনার মনের ইচ্ছে মত।
যেমনঃ আমি কেবলা মুখি হয়ে মেরাজের দুই রাকআত নফল নামাজ আল্লাহ্ রাজি ও খুসির জন্য আদায় করিতেছি। আল্লাহ্ হুয়াকবার। উপরক্ত নিয়তে দুই রাকাত করে চার রাকাত পর পর মুনাজাত করতে পারেন। এই ভাবে ১২ রাকাতের অধিক জত রাকাত খুশি আদায় করতে পারেন। আমি মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল। আমার খুন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন। আর কমেন্ট এর মাধ্যমে ভুলটুকু ধরিয়ে দিবেন (সকলের সুবিধারতে)। আল্লাহ্ হাফেজ।
নফল রোজা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মেরাজের রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজ-এর নফল রোজা তো রয়েছেই। যা আদি পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)–ও পালন করতেন; যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামে বিজ, অর্থাৎ চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৫১)।
এ ছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ; শবে কদরের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি বা হজরত দাউদ (আ.)-এর পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও সর্বোপরি প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয়; এবং শবে কদরের রোজা এর শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের পর রজব ও শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন; শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মোমেনিন বা মোমিন মাতাগণ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে নফল রোজা রাখা শুরু করতেন মনে হতো তিনি আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। (মুসলিম)।