শুরু হলো দুর্গাপূজা

শুরু হলো দুর্গাপূজা
  © সংগৃহীত

ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আজ শনিবার শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। এর আগে আজ সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরও সুসংহত হোক—এ কামনা করে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।’

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন—বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা—এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ দিয়েছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু, বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সে থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের হরি প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, ‘জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার গজে (হাতি) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঝড়-বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। এর ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে।

এদিকে পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারা দেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল, কাঁসা ও শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মণ্ডপ।

রামকৃষ্ণ মিশনের নিঘণ্টে বলা হয়েছে, সকাল সাড়ে ৭টায় সায়ংকালে কল্পারম্ভ, বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চণ্ডীপাঠে মুখরিত থাকবে সব মণ্ডপ এলাকা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৬টায়। পর দিন সোমবার মহা অষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৯টায় এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং সমাপন হবে বিকেল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় শুরু হবে নবমী পূজা। পুষ্পাঞ্জলি হবে সকাল সাড়ে ১০টায়। পর দিন বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় দশমী পূজা শুরু হবে। ওই দিন পুষ্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, সারা দেশে এ বছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের চেয়ে ৬টি বেশি।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানী ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বাসাবো বালুর মাঠ, শাঁখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এ বছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গত বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি সক্রিয়। আমাদের ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা এ বছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবেন।

দূর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।