আজ চাঁদে আবারো নভোযান পাঠাচ্ছে ভারত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৩, ০১:৪৫ PM , আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩, ০১:৫১ PM

চাঁদে আবারও চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে ভারত। আজ দুপুর ২ টা ৩৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণ হবে। এলভিএম৩-এম৪ রকেটের পিঠে চেপে চাঁদে পাড়ি দেবে চন্দ্রযান-৩। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
চার বছর আগে ভারত প্রথমবার চাঁদে চন্দ্রযান প্রেরণ করে। একেবারে শেষমুহূর্তে চন্দ্রযান ২-র সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় স্বপ্নভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল সে সময়। চন্দ্রযান ৩-র হাত ধরে ফের সেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ভারত।
চন্দ্রযান- ৩-র উৎক্ষেপণের সাক্ষী থাকতে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রে এল ২০০ জনের বেশি পড়ুয়া। সুভাষিণী নামে এক পড়ুয়া বলেছে, 'আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। আমি কল্পনা চাওলার মতো মহাকাশচারী হতে চাই। আমি অত্যন্ত উৎফুল্ল।' এক শিক্ষিকা বলেন, 'আমাদের জন্য একটা দারুণ মুহূর্ত। এখানে থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত বোধ করছি। সরাসরি চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণ দেখতে পাবে বলে পড়ুয়ারা অত্যন্ত উৎফুল্ল। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ইসরোর কাছে কৃতজ্ঞ।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন ফ্রান্সে আছেন। সেখান থেকেই চন্দ্রযান-৩ মিশন নিয়ে টুইট করলেন। তিনি বলেন, ‘ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে ১৪ জুলাই দিনটা স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা থাকবে। আমাদের তৃতীয় চন্দ্রাভিয়ান চন্দ্রযান-৩ যাত্রা শুরু করবে। দেশের আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে যাবে এই দুর্দান্ত মিশন।’
চন্দ্রযান-২ মিশনের সময় ল্যান্ডারের অবতরণের বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে দু'মিটার। যেটা ল্যান্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত বলেই জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কিন্তু যদি অবতরণের সময় সবকিছু ঠিকভাবে না চলে এবং সেই পরিস্থিতিকে সামলানোর জন্য ল্যান্ডারের বেগ প্রতি সেকেন্ডে তিন সেকেন্ড করা হতে পারে। সেজন্য মজবুত করা হয়েছে ল্যান্ডারের ‘পা’।
চন্দ্রযান-২ মিশনের সময় ল্যান্ডার এবং রোভারের অবতরণের জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছিল, সেটার পরিধি ছিল ৫০০ মিটার*৫০০ মিটার। চন্দ্রযান-৩ মিশনের ক্ষেত্রে সেটা একধাক্কায় অনেকটা বেড়েছে। এবার ল্যান্ডার এবং রোভার বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটার*২.৪ কিলোমিটারের একটি জায়গায় অবতরণ করবে বলে ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে।
ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, চন্দ্রযান-২ মিশন এবং চন্দ্রযান-৩ মিশনের ব্লু-প্রিন্ট পুরো আলাদা। কারণ চন্দ্রযান ২-র সময় বিবেচনা করা হয়েছিল যে কোন কোন বিষয়ে সফল হলে চাঁদে অবতরণ করা যাবে। এবার ঠিক উলটো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। চাঁদে অবতরণের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হতে পারে, সেটা বিবেচনা করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। সম্ভাব্য সমস্যার কথা বিবেচনা করে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ মিশনের আগে 'হিন্দুস্তান টাইমস'-কে একটি সাক্ষাৎকারে ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, চন্দ্রযান-২ মিশনে যে যে ত্রুটি হয়েছিল, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান-৩ মিশনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি। চন্দ্রযান-২ মিশনের থেকে আমরা ত্রুটি শুধরেছি। সম্ভাব্য সমস্যার আঁচ করে মহাকাশযানের আরও উন্নতি করা হয়েছে। যাতে যে কোনও সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে।'
'ভারতে চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণের কাউন্টডাউন চলছে', ফ্রান্সে দাঁড়িয়ে বললেন মোদী
ফ্রান্সের প্যারিসে প্রবাসী ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রযুক্তি এবং প্রতিভার উপর নির্ভর করেই একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব এগিয়ে যাবে। ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তাতে ওই বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেটার প্রমাণ হল- আমাদের মহাকাশ কর্মসূচি। থুম্বাতে রকেট স্টেশন নির্মাণের আলোচনা শুরু হয়েছিল, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ফ্রান্স। তারপর থেকে মহাকাশ ক্ষেত্রে দুই দেশই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। আজ আমরা একে অপরের স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণ করছি। আর এটা শুনে আপনারা আনন্দিত হবেন যে আমি যখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন ভারতে চন্দ্রযান ৩-র উৎক্ষেপণের জন্য কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরই ভারতের শ্রীহরিকোটা থেকে সেই ঐতিহাসিক উৎক্ষেপণ হবে।’ আর মোদী যখন চন্দ্রযান ৩-র কথা উল্লেখ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তুমুল হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়েন শ্রোতারা।
ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার দুপুর ২টো ৩৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান ৩-অভিযান শুরু হবে। যে মহাকাশ কেন্দ্র বঙ্গোপসাগরের কাছে অবস্থিত।