বীরত্বের সম্মান বুঝে পেলো ফায়ার সার্ভিস
- মো. ইখতিয়ার উদ্দিন
- প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৭:৫৩ PM , আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩, ০৯:২২ PM

প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে অনেকে যখন নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে, তখন ফায়ার ফাইটাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বিপদাপন্নদের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি সম্পদ রক্ষার জন্য কাজ করেন। সেই কাজ করতে গিয়ে তাদের অনেকে আহত হন, অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। শুধু আগুন নেভানোর ক্ষেত্রেই নয়, এরা ভূমিকম্প, সুনামি, ভূমিধস এমনকি সড়ক দুর্ঘটনাতেও উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসে।
বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়টি প্রতিষ্ঠান মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে এ বছর জনসেবায় স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এই পদকটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। এছাড়া বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) আরও ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মূল মন্ত্র হলো- গতি, সেবা ও ত্যাগ। প্রথম সাড়া প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে এ বিভাগের কর্মীরা আগুন নেভানো কাজ করেন। আগুন প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণকে প্রশিক্ষণও দেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের উদ্ধার, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে প্রেরণ ইত্যাদি করে থাকেন।
উদ্ধারের সময় নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত ফায়ার ফাইটাররা:
১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে ৩৯ জন ফায়ার ফাইটার কর্তব্য পালনকালে জীবন দিয়েছেন। তার মধ্যে গত বছরের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে সেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন ১৩ জন ফায়ার ফাইটার। সহকর্মীর লাশ পাশে রেখেই সাহসিকতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ করে গেছেন তারা। মানুষের জীবন রক্ষায় ফায়ার ফাইটার কতটা আন্তরিক তার নজির স্থাপন করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস শুধু অগ্নিনির্বাপণ কাজের সাথে জড়িত নয়, বরং যে কোন সমস্যা মোকাবেলা অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এমনকি জঙ্গি দমনের কাজেও অংশগ্রহণ করে থাকে। ২০১৭ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরে ‘জঙ্গি’ হামলায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিনের মৃত্যু হয়েছিল। আবদুল মতিন আত্মঘাতী জঙ্গিদের তীব্র অতর্কিত হামলার মুখেও সাহসিকতা, দৃঢ়তা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সর্বশেষ এ বছরের ৭ মার্চ রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে সিদ্দিক বাজার এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মারা গেছেন ২২ জন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে গেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গত বুধবার ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে আরও দুজনের লাশ মেলে। ফায়ার সার্ভিস পক্ষ থেকে জানানো হয়, আর কারও নিখোঁজ থাকার খবর এলে তারা খুঁজে দেখবেন।
গুলিস্তানে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বহুতল ভবনে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক উদ্ধার কার্যক্রমের অংশ: © সংগৃহীত
মানুষের জানমাল রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস:
তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে এ প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৭টি অগ্নিদুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। একই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯টি অ্যাম্বুলেন্স কলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৯ জন রোগী হাসপাতালে স্থানান্তর করেছেন। শুধু ২০২২ সালেই ফায়ার সার্ভিস ২৪১০২ টি অগ্নিদুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৮০৮ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করেছে।
তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিস:
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটনায় দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে তুরস্কে একটি সম্মিলিত সাহায্যকারী দল পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে অংশ নিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১২ সদস্যের উদ্ধারকারী দল তুরস্কে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের এই উদ্ধারকারী দল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে যায়: © সংগৃহীত
মানবিক সাহায্যে ফায়ার সার্ভিস
সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় মানবিক সাহায্যে নিয়োজিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় খোলা হয়েছিল বন্যায় উদ্ধারকাজের মনিটরিং সেল। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেটের সকল ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে সবাইকে স্ট্যান্ডবাই ডিউটিতে মোতায়েন রাখা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ‘দুঃসময়ের বন্ধু’: প্রধানমন্ত্রী
‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণকারীদের ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে পূর্ণ সক্ষমতার সর্বোচ্চ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সকে সম্পূর্ণ সক্ষমতার সঙ্গে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেছিলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সেবার ক্ষেত্র এবং দায়িত্বরতদের মর্যাদাও বাড়ানো হয়েছে। কারণ, আগুন লাগলে বা কোনো দুর্ঘটনা বা ভূমিকম্প বা কোনো কিছু ঘটলে অথবা কোনো ভবন ধসে পড়লে ফায়ার সার্ভিসই সবার আগে ছুটে যায়। এমনকি কোনো জাহাজ বা লঞ্চ যখন দুর্ঘটনায় পড়ে, তখনও এই ফায়ার সার্ভিসকেই আমরা পাই। তাই তাদের আরও যুগোপযোগী করা একান্ত প্রয়োজন। আর সেই পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি। এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সেবার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপও আমরা গ্রহণ করেছি।
দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সক্ষমতা বেড়েছে:
জানা যায়, ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো একটি ৪৭ মিটারের পুরনো গাড়ি ছিল, বর্তমানে
বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারের লেডার সংবলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ হয়েছে। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি এখন আছে। ফলে ফায়ার সার্ভিস এখন ২২তলা পর্যন্ত আগুন নেভাতে সক্ষম। এছাড়া দুটি রিমোট কন্ট্রোল ফায়ার ফাইটিং ভেহিক্যাল আছে। নদীপথে সক্ষমতা বাড়াতে ২৪টি রেসকিউ বোট ও ১০টি ফায়ার ফ্লোট কিনেছে প্রতি্ষ্ঠানটি। পরিদর্শকের সংখ্যা ৫০ থেকে ২৬৮, ডুবুরির সংখ্যা ২৫ থেকে ৮৫, অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা ৫০ থেকে ১৯২, আগুন নেভানোর পানিবাহী গাড়ি ২২৭ থেকে ৬১৭ এবং ফায়ার পাম্প ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৪৬টিতে উন্নীত করেছে।
মুন্সীগঞ্জে হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি’:
অগ্নিনিরাপত্তা ও সুরক্ষাব্যবস্থা আরও আধুনিকায়ন ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি’। ঢাকার সন্নিকটে জেলা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এই বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি। যেখানে অফিসার ও ফায়ারম্যানের বেসিক ও অ্যাডভান্স কোর্স সম্পন্ন হবে। এ ছাড়াও এই একাডেমিতে গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের ফায়ার ফরেনসিক ল্যাব। ১০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হবে বঙ্গবন্ধু ফায়ার একাডেমি। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই শুরু হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কার্যক্রম।
স্টেশন ও জনবল:
তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার সময় দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০৪টি। বর্তমানে দেশে চালু ফায়ার স্টেশন হলো ৪৯১টি। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে নতুন ২৮৭টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরও ৫২টি নতুন ফায়ার স্টেশন চালু হতে পারে।
২০০৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে এ জনবল হয়েছে ১৪ হাজার ৪৪৩ জন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনবলের সংখ্যা হবে প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের কাজ হাতে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশিক্ষণ ও মহড়া:
২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ ১৩ হাজার ৬১ জন শিক্ষার্থীকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৯ লাখ ২৫ হাজার ২৪০ জন কর্মীকে দুই দিনব্যাপী অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ প্রতিরোধে হেলপিং ফোর্স হিসেবে তারা ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৪৪৯ জনকে তিন দিনব্যাপী স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল এবং শামসুন নাহার হলের যৌথ উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহযোগিতায় একটি মহড়ার আয়োজন করা হয়। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রোকেয়া হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ মহড়া উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সভাপতিত্বে মহড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহনারা খাতুন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধির মহড়া: © সংগৃহীত
বীরত্বের পদক পেয়েছেন ৪৫ ফায়ার ফাইটার:
কর্মক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে সেবা দেওয়া ৪৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পদক দেওয়া হয়। সেবা ও বীরত্বসূচক চার ক্যাটাগরিতে এ পদক দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানের এ পদক দেওয়া হয়।
২০২২ সালে চারটি ক্যাটাগরিতে বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদকপ্রাপ্ত ৪৫ জনের মধ্যে ২৯ জনকে পদক পরিয়ে দেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। এর আগে, পদক পাওয়া অপর ১৬ জনের মধ্যে ৩ জন কর্মকর্তা ও ১৩ জন অগ্নিবীরের স্বজনদের পদক প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৫ ফায়ার ফাইটার পদক দেয় ফায়ার সার্ভিস: © সংগৃহীত
যেভাবে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস:
কোথাও আগুন লেগে গেলে নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিসে ফোন করতে হয়। এ সময় তারা আগুন লাগার স্থানের ঠিকানা জেনে নেয়। ওদিকে অগ্নিনির্বাপণ-কর্মীদের একটি দল সব সময় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে যেন খবর পেলেই দ্রুততম সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে পারে।
এই লক্ষ্যে আগে থেকেই ট্যাংকারে পানি ভরা থাকে। অগ্নিনির্বাপণ-কর্মীরা সেই ট্যাংকার নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন। এ সময় তাদের গাড়িতে সাইরেন বাজে যেন রাস্তার অন্য গাড়ি একপাশে সরে গিয়ে তাদের আগে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা পানি ছিটানো শুরু করেন। পানিবাহী গাড়ির পাশাপাশি তাদের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় মই থাকে, যার সাহায্যে তারা বহুতল ভবনে পানি ছিটাতে পারেন এবং সেখান থেকে আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে পারেন। আগুন নেভানোর পর তারা আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান করেন। ভবিষ্যতে যেন আর আগুন না লাগে, সেই পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তাও তারা দিয়ে আসেন।
আগুন লাগলে অথবা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১৬১৬৩ এই নাম্বারে কল করতে পারেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স:
প্রতিষ্ঠানটির পুরো নাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত ভারতে ১৯৩৯-৪০ অর্থ সালে ফায়ার সার্ভিস সৃষ্টি করেন। বিভক্তিকালে আঞ্চলিক পর্যায়ে কলকাতা শহরের জন্য ‘কলকাতা ফায়ার সার্ভিস’ এবং অবিভক্ত বাংলায় বাংলার জন্য ‘বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস’ সৃষ্টি করেন।
১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসকে পূর্ব পাকিস্তান ফায়ার সার্ভিস নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৫১ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর তৈরি করা হয়। ১৯৮২ সালে ফায়ার সার্ভিস পরিদপ্তর, সিভিল ডিফেন্স পরিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্ধার পরিদপ্তর-এই তিনটি পরিদপ্তরের সমন্বয়ে বর্তমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরটি গঠিত হয়।