বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান, সমীক্ষা নিয়ে ভারতের আপত্তি
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৩৪ PM , আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৩৪ PM

ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতা বিবেচনায় প্রায় ভেঙে পড়া অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (জিএইচআই) ১২৫টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের অবস্থান ৬০তম, যেখানে বাংলাদেশের ৮১তম অবস্থানে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) জিএইচআইয়ের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের এই সূচক প্রকাশিত হয়। প্রতিবছর কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এ সূচক তৈরি করে।
এই সূচক অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ৬৯তম অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে নেপাল। পাকিস্তান ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে ১০২তম ও ১১১তম।
২০২২ সালের এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৪তম। সেই হিসেবে গতবারের চেয়ে অবস্থান এগিয়েছে। কিন্তু স্কোর কমেছে। এবারের ক্ষুধা সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ১৯, যা আগের বছর ছিল ১৯ দশমিক ৬।
অপুষ্টিতে ভোগা জনসংখ্যার হার, বয়সের তুলনায় স্বল্প উচ্চতার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর ও উচ্চতার তুলনায় স্বল্প ওজনের ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরর সংখ্যা এবং শিশুমৃত্যুর হার বিবেচনা করে শূন্য থেকে ১০০ স্কোরে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
জিএইচআইয় সূচকে স্কোর শূন্য মানে ক্ষুধা নেই। স্কোর ১০০ হলে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। এই হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষুধার মাত্রা মাঝারি পর্যায়ে আছে। গতবারও তাই ছিল। ২০১২ সালে ২৮ দশমিক ৬ স্কোরসহ ক্ষুধার মাত্রা গুরুতর পর্যায়ে ছিল। কিন্তু এরপর অগ্রগতি হচ্ছে। ২০২১ সালে স্কোর ১৯ দশমিক ১ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
এদিকে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক (জিএসআই) প্রকাশিত সমীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারত। ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, যে পদ্ধতিতে এই সমীক্ষা হয়েছে তা ত্রুটিযুক্ত। ভারতের পরিস্থিতি এতো খারাপ নয়। সমীক্ষাটি অভিসন্ধিমূলক বলেও দাবি করা হয়েছে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে গত বছর ভারতের স্থান ছিল ১০৭ নম্বরে। এ বছর দেশটি আরও চার ধাপ নিচে নেমে গেছে। ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এখন ১১১ নম্বরে। শিশুদের অপুষ্টির হারের দিক থেকেও ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। দেশটিতে শিশুদের অপুষ্টির হার ১৮ দশমিক সাত শতাংশ। গোটা বিশ্বে যা সর্বোচ্চ।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে ভালো। পাকিস্তান আছে ১০২ নম্বরে। বাংলাদেশ ৮১ নম্বরে। নেপাল এবং শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ৬৯ এবং ৬০ নম্বরে। রিপোর্টের দাবি, ভারতে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষের যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর খাবার জোটে না। ১৫ থেকে ২৪ বছরের নারীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ রক্তাল্পতায় ভোগেন। পাঁচ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার তিন দশমিক এক শতাংশ।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, মাত্র তিন হাজার স্যাম্পেল সাইজে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। ফলে সমীক্ষাটি ত্রুটিপূর্ণ। গোটা দেশের পরিস্থিতি এখানে উঠে আসেনি। বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি- ভারতে শিশু অপুষ্টির হার সাত দশমিক দুই শতাংশের নিচে। বহুদিন ধরেই এই পরিসংখ্যান আছে। ফলে নতুন রিপোর্টের বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য একমত নয় কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলো। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, সরকারের অপারগতা স্পষ্ট হয়েছে রিপোর্টে। কেন্দ্রীয় সরকার এখন সত্য ধামাচাপা দিতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।
এবারের ক্ষুধা সূচকে অনুযায়ী, বিশ্বের অন্তত নয়টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা ‘উদ্বেগজনক’ (স্কোর ৩৫.১ থেকে ৪৯.৯) পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব দেশ হচ্ছে সোমালিয়া, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ইয়েমেন, মাদাগাস্কার, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, লেসেথো ও নাইজার।
৫-এর নিচে স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে কম ক্ষুধার দেশ ২০টি। এগুলো হলো- বেলারুশ, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উরুগুয়ে।