হিজাব পরা নারীরা মানসিক অবসাদ ও হতাশায় ভোগেন কম: মার্কিন গবেষক

হিজাব
  © ব্রুকিংস (ফাইল ছবি)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে, তাই জনসমক্ষে মুসলিম মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা দেখা ক্রমশ সাধারণ হয়ে উঠেছে।

হিজাব পরা নারীদের বিষয়ে মার্কিন গবেষক জানিয়েছেন, যেসব নারী নিয়মিত হিজাব পরে থাকেন তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত বা হতাশায় ভোগেন না। তারা অনেক বেশি উজ্জ্বীবিত ও প্রাণবন্তভাবে জীবনযাপন করেন। 
      
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ সোশ্যাল ওয়ার্কের অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার রিলিজিয়ন অ্যান্ড আরবান সিভিল সোসাইটির গবেষণার প্রোগ্রামের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো ডেভিড আর হাজ এমন দাবি করেছেন। তিনি আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম এবং সংস্কৃতি বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং নিপীড়ন ইস্যুতে কর্মশালা পরিচালনা করে থাকেন। 

গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমিসহ আমার কয়েকজন সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিম নারীদের সঙ্গে কথা বলি। পর্দা বা হিজাবের সঙ্গে বিষণ্নতার কোনো সম্পর্ক আছে কী না তা আমরা খতিয়ে দেখেছি। হিজাব পরার সঙ্গে নারীর বিষণ্ণতার কোনো ধরনের সম্পর্ক আমরা খুঁজে পাইনি। তবে আমরা বিপরীত অবস্থান খুঁজে পেয়েছি। যেসব মুসলিম নারীরা হিজাব পরে থাকেন তাদের মধ্যে খুবই কম মাত্রায় বিষণ্নতার উপসর্গগুলো দেখা গেছে। আমরা গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, হিজাব বা বোরখা আদতে মুসলিম নারীদের বিষণ্নতা থেকে সুরক্ষা দেয়।

মুসলিম নারীদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শোনায় আমাদের ফলাফল অনেক বেশি পরিপূর্ণতা পেয়েছে। মুসলিম নারীদের পর্দা বা হিজাব পরা থেকে নিরুৎসাহিত করার অপচেষ্টা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের লঙ্ঘন। জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ-১৮ তে স্পষ্টভাবে সব মানুষকে যেকোনো পরিবেশে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যে নারীরা হিজাব পরাকে সাবলিলভাবে বেছে নিয়েছেন তারা তাদের সেই মৌলিক অধিকারকে সহজভাবে প্রকাশ করার অধিকার পাচ্ছেন।

সমসাময়িক আমেরিকান সমাজে হিজাবের ইসলামিক অনুশীলন, বোরখা বা মাথার স্কার্ফ পরা মহিলাদের তুলনায় কয়েকটি আচরণ বেশি বিতর্কিত।

বোরখা পরা কেন বিতর্কিত? যদিও বিভিন্ন ব্যাখ্যা বিদ্যমান। অনেক নারীবাদী এবং অন্যান্য আমেরিকানরা পর্দাকে একটি নিপীড়নমূলক অভ্যাস হিসেবে দেখেন। নিপীড়নের আরেকটি ফরমের মতো পর্দা করার ফলে বিষণ্ণতাজনিত উপসর্গের উচ্চ মাত্রা সহ ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের প্রভাব হতে পারে বলে মনে করা হয়। নারীদের হিজাব পরাকে পুরুষদের তুলনায় দ্বিতীয় শ্রেণির মনে করা হয়। তাই পর্দা করার প্রয়োজন নেই বলেই তাদের মত।

এদিকে, গবেষকদলকে নিজেদের মতামত দিয়েছেন এমন একাধিক নারী জানিয়েছেন, হিজাব পরলে আমরা নিজেদের অধিনস্ত মনে করি না। আমরা বরং নিজের মুক্ত বা স্বাধীন মনে করি। এর মাধ্যমে আমাদের আত্মিক অবস্থায় উন্নয়ন হয়। শালীনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার মধ্যে আমরা সম্মানবোধ করি। নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করে আত্মতৃপ্তি পাই। এর মাধ্যমে যেকোনো পরিবেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদাকর সম্পৃক্ততা আমরা অনুভব করি। সেই সঙ্গে পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া সংস্কৃতিকে এড়িয়ে নিজেদের ধর্মীয় চর্চা স্বাধীনভাবে প্রকাশের অধিকার চর্চা করতে পারি। 


মন্তব্য