একটি গাভি থেকে সফল খামারি জিএম কাদের

গরু
  © সংগৃহিত

বাঙালি ও বাংলাদেশের জনসাধারণ পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গরু পালন করে আসছে। বর্তমানে গরু পালন করে শুধু পুষ্টির চাহিদাই পূরণ নয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জিএম কাদের অন্যতম একজন। দুগ্ধ গাভী পালনে একজন সফল খামারি হিসেবে এই অঞ্চলে মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন তিনি।

সম্প্রতি তিনি উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের প্রধানবাড়ি (খেংটি) এলাকায় নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন জিম নামের একটি ডেইরি ফার্ম। দেশি ও বিদেশি মিলে ২৮টি গাভী ও ২টি ষাঁড় রয়েছে তার খামারে। প্রতিদিন ১২০০ লিটার দুধ উৎপাদন হয় এ খামার থেকে। এসব গরুর জন্য নিয়মিত বাজার থেকে ঘাস ক্রয় করে গরুকে খাওয়ান তিনি। 

জানা গেছে, ২০১৬ সালে দেশি একটি দুগ্ধ গাভী পালনে মধ্য দিয়ে খামারের কাজ শুরু করেন তিনি। কয়েক বছরের ব্যবধানে তার খামারে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৩০টি গরু রয়েছে।

জিম ডেইরি ফার্মের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও দেখ-ভালের জন্য রয়েছে তিন জন শ্রমিক। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে। এদের কেউ গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছে কেউ আবার গাভী থেকে দুধ নেওয়ার ও বাজারজাত করার কাজ করছেন। কেউবা গোবর গুলোকে গ্যাসের কাজে ব্যবহার করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে। এছাড়া নিজস্ব কৃষি জমিতে সবজি উৎপাদনে জৈবসার হিসেবে গোবর ব্যবহার করছেন। 

উন্নত জাতের এই ফ্রিজিয়ান ৩০টি গাভীতে তার খামার পরিপূর্ণ হয়ে আছে। ৩০টি গাভীর ভিতর ৬টি গাভী দুধ দিচ্ছে। বাকী গাভীগুলো খুব অল্পদিনের মধ্যে বাচ্চা দেবে বলেও তিনি জানান। 

প্রতিদিন গড়ে ১২০ কেজির বেশি দুধ বিক্রি হচ্ছে তার খামারে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টাকা আয় হয়, যা থেকে মাসিক আয় হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং প্রতি বছরে খরচ বাদে আয় প্রায় ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।

খামারের স্বত্বাধিকারী জিএম কাদের বলেন, ‘২০১৫ সালে সন্তানের পুষ্টির চাহিদা পূরণে স্থানীয় গ্রামের বাজার হতে প্রতিদিন গাভীর দুধ কিনে এনে খাওয়ানো হত। এতে কিছুটা সমস্যা হত। এ কারণে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে ৮৪ হাজার টাকা মূল্যে একটি ফ্রিজিয়ান গরু ক্রয় করি। ওই গরু থেকে ৬ কেজি দুধ পাওয়া যেত। এত গুলো খেয়ে শেষ করা যেতনা। এ কারণে একপর্যায়ে খামার করার চিন্তা মাথায় আসে। পর্যায়ক্রমে আজকের এ খামার। সরকারি সহায়তা পেলে হয়ত আরও ভালো করা সম্ভব হবে।’  

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া স্লোগান ‘বদলে যাবে দেশ, দুধ মাংসের বাংলাদেশ।’ এ স্লোগানকে প্রাধান্য দিয়ে যদি গরুর খাদ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া যায় তাহলে আমাদের মত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সফল হতে পারবো। কারণ যখন ৭০০ টাকা গো খাদ্যের ফিটের বস্তা ছিলো, তখনও কিন্তু দুধের দাম ৫০ টাকা, এখন ১৩’শ টাকা ফিটের বস্তা এখনও দুধের দাম ৫০ টাকা। তাহলে কিভাবে সম্ভব, আমরা কিভাবে টিকে থাকবো।’ 

এ ব্যাপারে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, ‘জিম ডেইরী ফার্ম দেখেছি। গরু গুলোও ভালো স্বাস্থ্যবান। সরকারি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য। খামারটি বেশ সম্ভাবনাময়। সরকারি সহায়তা পেলে আরও ভালো করতে পারে।’


মন্তব্য