৫দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ এলিফ্যান্ট রোড এলাকায়; নির্বিকার ওয়াসা!

ওয়াসা
  © ফাইল ছবি

আগামী ১ জুলাই থেকে বাসাবাড়ি ও অফিস আদালতে সরবরাহ করা পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। বুধবার (২৯ মে) পত্রিকায় প্রকাশিত ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির সমন্বয়ের লক্ষ্যে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম নির্ধারণ করেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা, যা এখন আছে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা।

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য একই পরিমাণ পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ টাকা ২০ পয়সা, যা বর্তমানে আছে ৪২ টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন, ন্যূনতম বিলসহ সব প্রকার (পানি ও পয়ঃ) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।

এর আগে করোনাকালে ঢাকা ওয়াসা দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছিল। এবার নিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৬ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়লো ১৬ বার।

তবে এই দাম বাড়ানোর খবরের মধ্যেই গত মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোর থেকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের এস কে গলি এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ। গত ৫ দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে বাসিন্দারা।

যদিও সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য পানি আসছে। তবে সারাদিন চলার মতো এই পানি পর্যাপ্ত নয়। ফলে ওয়াসার প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ছেন বাসিন্দারা।

আজ মঙ্গলবার (০১ জুন) সরেজমিনে দেখা গেছে, এলিফ্যান্ট রোডের এসকে গলি এলাকায় এক মুরুব্বি জামা-কাপড় হাতে অন্য কোথাও যাচ্ছে গোসল করতে। বোতলে করে পানি কিনে নিয়ে যাচ্ছে আরেকজন।

বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ভোর থেকে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় ২০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিটের জন্য পানি ছাড়া হচ্ছে। এর ভেতরে সবাই পাত্রে করে পানি ধরে রাখছেন। এই পানিতে কোনরকম রান্না-বাড়া চললেও গোসল ও বাথরুমে বেশি অসুবিধা হচ্ছে। 

পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়েছে নারীরা। তারা না পারছে পুরুষদের মতো বাইরে কোথাও গিয়ে গোসল করে আসতে, না পারছে বাসার পানিতে ঠিকমতো গোসল করতে। 

মেসবাহ উৎস্য নামে এস কে গলির এক বাসিন্দা বলেন, গত ৫দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় ব্যাপক অসুবিধায় পড়েছি। বিশেষ করে ওয়াশরুম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে। আর গোসল করতে জামাকাপড় নিয়ে যাচ্ছি ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের হলে। আজ এই হলে তো কাল ওই হলে গিয়ে গোসল করে আসছি।

মাহমুদ ইসলাম কাজল নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, জুলাই থেকে ১০ শতাংশ পানি বাড়াচ্ছে। এদিকে ৫দিন ধরে বাসায় পানি নেই। দেশে মগের মুল্লুক চলছে মনে হয়।

এক নারী বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুরুষরা নাহয় কোনরকম বাইরে গিয়ে গোসল করে আসছে, এই গরমে আমরা কেমনে কী করি বলেন তো?

পানি কিনে নিয়ে যাওয়া একজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি জানান, এদিকে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় খাওয়ার পানির জন্য ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অন্য জায়গা থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। যদিও ওয়াসার পানিই কিনে খাচ্ছি। এতোদিন ধরে দোকান থেকে কিনে খাওয়ার সাধ্য নাই।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার বোর্ড মেম্বার ও পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরীর ফোনে কল করা হলে তিনি জানান, আমি আসলে এ বিষয়ের দায়িত্বে নাই। কে বা কারা আমার ফোন নাম্বার ওয়েবসাইটে দিয়ে রেখেছেন। এজন্য অনেকেই আমার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চান। আমি যতটুকু পারি সাহায্য করি। তবে এ বিষয়ে আপনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মিয়াজী বলেন, এলিফ্যান্ট এলাকা ওয়াসার ৩নং জোনের মধ্যে পড়ে। ওই জোনের দায়িত্বে আছেন জয়ন্ত শাহ। আপনি ওনার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। 

তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে জয়ন্ত শাহার মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এদিকে ঢাকা ওয়াসার হটলাইন ১৬১৬২ নম্বরে ফোন করা হলে কল প্রতিনিধি বলেন, মাটির নিচে পানি নাই, এজন্য পানি সরবরাহে একটু সমস্যা হচ্ছে। আপাতত ওয়াসার ভ্রাম্যমান ও যেসব জায়গায় ওয়াসার পানির কল আছে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করতে পারেন।