ধ্বংসের মুখে ‘পৃথিবীর স্বর্গ’, ৪০ বিজ্ঞানীর সতর্কতা 

জলাভূমি
  © ফাইল ফটো

বিশ্বের বৃহত্তম জলাভূমি প্যান্টানালের মধ্য দিয়ে একটি বাণিজ্যিক জলপথ চালু করা হলে ওই অঞ্চলের সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র এবং জীবাঞ্চল বিলীন হয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে কয়েক হাজার হেক্টর জমি দাবানলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন অন্তত ৪০ বিজ্ঞানী। প্যান্টানাল জলাভূমিটি ব্রাজিল, বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়ের মধ্যে বিস্তৃত, যার আকার জার্মানির প্রায় অর্ধেক। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম জলপথ তৈরির পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে চাষের সম্প্রসারণ হলে তীব্র দাবানলের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

বিজ্ঞানীর এই আন্তর্জাতিক দলটি জানিয়েছে, জলপথের উন্নয়ন বাস্তুতন্ত্রের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি। এর মধ্যে রয়েছে প্লাবনভূমি কমে যাওয়া, দাবানলের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং অঞ্চলটিকে একটি সমতলভূমিতে  রূপান্তর করে যাতে করে সেখানে চাষ করা সহজ হয়ে যায়। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

ইউনিভার্সিটি অফ ট্যুরসের একজন বাস্তুবিজ্ঞানী এবং ইউনেস্কোর নদীভিত্তিক সংস্কৃতির চেয়ার অধ্যাপক কার্ল এম ওয়ান্টজেন বলেন, এই জলাভূমিটি পৃথিবীতে সত্যিকারের একটি স্বর্গ। আর কোথাও আপনি এত  ম্যাকাও, চিতাবাঘ, জলাভূমির হরিণ, অ্যানাকোন্ডা, কেম্যান, তিন শতাধিক বিশেষ প্রজাতির মাছ, ৫০০ প্রজাতির পাখির, দুই হাজার ৫০০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ দেখতে পাবেন না। সবই এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।' 

ব্রাজিলের সরকার প্যারাগুয়ে নদীর উজানে ৭০০ কি.মি. দীর্ঘ প্যারাগুয়ে-পারানা হাইড্রোভিয়া (জলপথ) তৈরি করতে চায়। ২০২২-২০২৩ সালে প্যান্টনালের মধ্যে বন্দর নির্মাণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।

ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ মাটোর বিজ্ঞানী পিয়েরে গিরার্ড বলেন, যদি হাইড্রোভিয়া প্রকল্পটি এগিয়ে যায়, প্যারাগুয়ে নদীতে ড্রেজিংসহ প্যান্টানালে বিশালাকার জলযান যাতায়াত করবে। আর এর মধ্যে দিয়ে  প্যান্টানালের বাস্তুতন্ত্র পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। 

২০২৪ সালে ব্রাজিলের আওতাধীন এই অঞ্চলে রেকর্ড দাবানলে প্রায় ৩৭ লাখ একর আগস্টের প্রথম দিকে পুড়ে যায়। ১৯৮৫ সাল থেকে প্যান্টানাল তার ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি হারিয়েছে। ব্রাজিলের অন্যান্য বাস্তুতন্ত্রের চেয়ে বেশি। যদি জলপথ প্রকল্পটি এগিয়ে যায়, তবে এই জলাভূমিটি আরও সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। যা এটিকে আরও শুষ্ক এবং দাবানলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। যেমন ২০২০ সালে দেখা গেছে।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, প্যারাগুয়ে নদীর উজানের অংশটি অগভীর। এটিকে ৫০ মিটার গভীর জলযান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হলে নদীর তলদেশে ব্যাপক মাত্রায় ড্রেজিং, নদীর তীরে বাঁধ এবং বন্দর নির্মাণ করতে হবে। এটি স্থায়ীভাবে বন্যার প্রাকৃতিক চক্রকে পরিবর্তন করবে এবং জলাভূমি এলাকা সঙ্কুচিত করে তুলবে।