এক নজরে দেখে নিন আদ্যোপান্ত
পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কে?
- আনাস হক
- প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২২, ০৭:৫০ PM , আপডেট: ২৫ জুন ২০২২, ০৪:৪৮ PM

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে এই সেতুর মাধ্যমে।
শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত পদ্মাসেতু নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই চলছে সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব ও অহংকারের: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান ৪১টি, মোট পিলার ৪২টি। শেষ বা ৪১তম স্প্যানটি বসানো হয় ১২ ওয ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর, ৪১টি স্প্যান বসাতে সময় লাগে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিন। ৪১তম স্প্যান বসে ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার, পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। সংযোগকারী স্থানগুলো মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা। জনসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে আগামী ২৬ জুন সকালে।
পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কে?
গত রবিবার (৫ জুন) খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব হলরুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতো বিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু তো কারও পৈত্রিক সম্পত্তি না, পদ্মা সেতু রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় উদ্যোগে করা।
“এখানে আরও একটি কথা আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন খালেদা জিয়া। একদিকে না পদ্মা সেতুর দুই দিকেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো কিন্তু কেউ উচ্চারণও করে না, বলেও না। যমুনা সেতু যখন তৈরি হয় তখন একই অবস্থা তৈরি করেছে। যারা করলেন তাদের বাদ দিয়ে শুধু একজনের নাম, একজনের মূর্তি তৈরি করে নামটাই পরিবর্তন হয়ে গেলো। অর্থাৎ এই দেশে যেই ক্ষমতায় যায় সব কিছু দখল করে নেয়।”
তার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত সোমবার (৬ জুন) এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) স্বপ্নে দেখেই এমন কাল্পনিক বক্তব্য দিয়েছেন।
“মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির নেতারা ইদানীং এমন অনেক দিবাস্বপ্ন দেখছেন। এটিও সেই দিবাস্বপ্নেরই অংশ। পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর নিয়ে ফখরুল সাহেবের এ বক্তব্য বছরের সেরা আবিষ্কার।”
মিথ্যাচারকে বিএনপির ধর্ম বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের প্রতি তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কখন এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন? নব আবিষ্কৃত সেই ভিত্তিপ্রস্তরের ছবি দেখতে চাই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্থাপন করেননি বরং ২০০১ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০০১ সালের ৪ জুলাই তারিখে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনার পর প্রার্থনা কালীন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কর্তৃক স্টক ফটো ওয়েবসাইট Alamy-তে প্রকাশ করা হয়েছিলো। নিচে ছবিটি দেখুন-
তাছাড়া ২০০১ সালের ৪ জুলাই ও ৫ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রিন্টেড ভার্সনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। ৪ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ‘আজ পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তার স্থাপন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লৌহজং এর মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিবেন....। নিচে ছবিটি দেখুন-
পরদিন ৫ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ‘পদ্ম সেতু নির্মিত হেইলে গোটা দশ সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসিবে: প্রধানমন্ত্রী’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নিচে ছবিটি দেখুন-
গত সোমবার এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনাই ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা ইতিহাসের অংশ। তখনকার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় এবং এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের ছবিও আছে।
তথ্যমতে, ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বপ্রথম পদ্মা সেতুর প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয় এবং ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতা আসার পর ২০০৪ সালে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার মাধ্যমে সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু জাইকার মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই ব্যতীত ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কিংবা ১৯৯৮ সালের পূর্বে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন পদ্মা সেতুর কোনো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে এমন কোনো তথ্য দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে নেই।
এক নজরে পদ্মা সেতু
১৯৯৮-১৯৯৯ সাল
তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বপ্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল।
২০০১ সালের ৪ জুলাই
মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রথম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৪ সাল
তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের আমলে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই করে মাওয়া-জাজিরার শেষ প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের সুপারিশ করে।
২০০৭ সাল
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয় এবং সে বছরই প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়।
২০০৮ সাল
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে।
২০০৯ ও ২০১০ সাল
ক্ষমতা গ্রহণের ১৩ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়াগ প্রস্তাব অনুমোদন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য নকশা প্রণয়নে পরামর্শক নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার। ২০১০ সালে পরামর্শক সেতুর প্রাথমিক নকশা সম্পন্ন করে।
২০১০ সাল
১১ এপ্রিল মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করে সরকার। তবে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে একই বছরের ১১ অক্টোবর পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়।
২০১১ সাল
১১ জানুয়ারি সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন করে তৎকালীন মন্ত্রিসভা। একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণসহায়তার অনুমোদন দেয়। এবং ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি সই হয়।
একই প্রকল্পে ১৮ ও ২৪ মে যথাক্রমে জাইকা ও আইডিবির সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি সই হয়।
২০১২ সাল
সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি ঋণচুুক্তি বাতিল করে বাকি দাতা সংস্থাগুলোও। বিশ্বব্যাংক সরে যাবার সপ্তাহ খানেকের মাঝেই ২০১২ সালের ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
২০১৪ সাল
পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামের একটি চীনা ফার্মের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১৭ জুন বাংলাদেশের সরকারের একটি চুক্তি সই হয়।
২০১৫ সাল
১২ ডিসেম্বর মূল সেতু নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১৭ থেকে ২০২০
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এবং ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর মাওয়া প্রান্তে অবস্থিত ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় পদ্মাসেতুর ৪১ তম এবং শেষ স্প্যান।
১৭ মে, ২০২২
গত ১৭ মে পদ্মা পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা
গত ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
যা আছে পদ্মা সেতুতে
১. পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’।
২. পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। এই সেতু কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে। (যা বিশ্বে প্রথম)।
৩. পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় (মূল সেতুতে) ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
৪. ২০১৭-১৮ অর্থবছর পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ ছিল ৫২৪ কোটি টাকা।
৫. পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
৬. পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।
৭. পদ্মা সেতুতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা।
৮. পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
৯. পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।
১০. পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
১১. পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর।
১২. পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
১৩. পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন হয়েছে দুই পাড়ে ১২ কিলোমিটার।
১৪. পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।
১৫. পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।
১৬. পানির স্তর থেকে পদ্মা সেতুর উচ্চতা রয়েছে ৬০ ফুট।
১৭. পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট।
১৮. পদ্মা সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি।
১৮. প্রতি পিলারের জন্য পাইলিং হয়েছে ৬টি। তবে মাটি জটিলতার কারণে ২২টি পিলারের পাইলিং হয়েছে ৭টি করে।
১৯. পদ্মা সেতুর মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৮৬টি।
২১. পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে।
২২. সেতুটি নির্মিত হলে দেশের মোট জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু নির্মাণ অপমানের প্রতিশোধ
পদ্মা সেতুর আদ্যোপান্ত
প্রকল্পের নাম: পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প।
প্রকল্পের অবস্থান: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। দেশের মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় প্রকল্পের অবস্থান। সেতুর উত্তর প্রান্তে মাওয়া, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এবং দক্ষিণ প্রান্তে জাজিরা, শরীয়তপুর, শিবচর ও মাদারীপুর।
যেভাবে শুরু: ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।
একনেক সভায় অনুমোদন: ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।
প্রকল্পের মেয়াদ: ১ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ৩০ জুন ২০২৩।
পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া: পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অঙ্গীকার করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই অঙ্গীকার থেকে সংস্থাটি সরে যায়। এ ধরনের কাজের শর্ত অনুযায়ী মূল ঋণদাতা চলে গেলে চলে যায় অন্যরাও। কাজেই একে একে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের মোট ব্যয়: ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
মূল সেতুর ঠিকাদার: পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।
মূল চুক্তিমূল্য: ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
কাজ শুরু: ২৬ নভেম্বর, ২০১৪।
চুক্তি অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির তারিখ: ২৫ নভেম্বর, ২০১৮। পরে কয়েক ধাপে সময় বাড়ানো হয়।
কাজের মূল সময়সীমা: ৪৮ মাস। বর্ধিত সময় ৪৩ মাস।
কাজ সমাপ্তির পুনঃনির্ধারিত তারিখ: ৩০ জুন, ২০২২ (বর্ধিত সময়সহ)।
এ পর্যন্ত কাজের ভৌত/বাস্তব অগ্রগতি: ৯৮ শতাংশ।
রেল সংযোগ: পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে।
অফিসিয়াল নাম: পদ্মা সেতু।
নকশা: আমেরিকান মাল্টিন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম এইসিওএমের (AECOM) নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত একটি দল।
ধরণ: পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট।
প্রধান উপকরণ: কংক্রিট ও স্টিল।
রক্ষণাবেক্ষণ: বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
দৈর্ঘ্য: পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
প্রস্থ: পদ্মা সেতুর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার।
ভায়াডাক্ট: পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার।
ভায়াডাক্ট পিলার: ৮১টি।
পানির স্তর থেকে উচ্চতা: ৬০ ফুট।
পাইলিং গভীরতা: ৩৮৩ ফুট।
মোট পিলার: ৪২টি।
মোট পাইলিং: ২৮৬টি।
সংযোগ সড়ক: পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
মোট লোকবল: পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ করছে প্রায় চার হাজার মানুষ।
প্রবৃদ্ধি বাড়বে: ১ দশমিক ২ শতাংশ।
নদীশাসন: প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়।
ঠিকাদারের নাম: সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড চায়না।
চুক্তিমূল্য: ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণ: ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর।
অ্যাপ্রোচ রোড: জাজিরা ও মাওয়া।
সেতু পাড়ে বৃক্ষরোপণ: লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪ লক্ষাধিক।
পদ্মা সেতু জাদুঘর স্থাপন
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর প্রতিষ্ঠা’র জন্য নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজ চলমান।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও অভয়ারণ্য ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি: পদ্মা সেতু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা সম্পন্ন হয়েছে এবং গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ‘খসড়া ম্যানেজমেন্ট প্লান’ চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান।