ঢাবিতে চান্স পেলে যে বিষয়ে পড়তে চান ৫৫ বছরের বেলায়েত

ভর্তি পরীক্ষা
মো. বেলায়েত শেখ  © মোমেন্টস ফটো

আগামীকাল শনিবার (১১ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও দেশের সাতটি বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনস্থ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। এই  ইউনিটের ১ হাজার ৩৩৬ আসনের বিপরীতে ৭৮ হাজার ২৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সে হিসেবে ‘ঘ’ ইউনিটে প্রতি আসনের জন্য লড়বেন ৫৮ জন শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৫৫ বছর বয়সী মো. বেলায়েত শেখ। গাজীপুর শ্রীপুরের এই ব্যক্তি তিন সন্তানের জনক। পরীক্ষার আগে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছন অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এই ব্যক্তিটি।

পরীক্ষার আগের দিন আজ শুক্রবার (১০ জুন) বিকেলে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর সঙ্গে কথা হয়েছে বেলায়েতের। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে কোন বিষয়ে পড়তে চান তাও জানিয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির ছেলে বেলায়েত শেখ। চলতি বছর বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি (ভোকেশনাল) পাস করেন ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে তিনি। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন। 

তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার। সেই লক্ষ্যে সাইফুরস ভার্সিটি কোচিংয়ের মাওনা শাখায় ক্লাসও করছেন তিনি। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক। জাতীয় দৈনিক করতোয়ার শ্রীপুর প্রতিনিধি তিনি। এছাড়া জেটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।

জানা গেছে, বেলায়েত শেখের জন্ম ১৯৬৮ সালে। ছোটবেলা থেকেই খুব কাছ থেকে অভাব দেখেছেন। এর মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। অভাবের তাড়নায় ১৯৮৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।

বেলায়েত জানান, ১৯৮৩ সালে আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। তখন বাবার অসুস্থতা এবং অভাবের তাড়নায় পরীক্ষা দিতে পারিনি। ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালে পরীক্ষা দিতে চাইলাম। সে বছর শুরু হলো বন্যা। ১৯৯০ সালেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে সময় মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের কথা ভেবে বিয়ে করি। বাবার তখনও অভাব ছিল। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। ২৫-২৬ বছর একাধারে আমিই সংসার চালিয়েছি। এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করেছিলাম। মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ ছিল। ওইসব করেই সংসার চালাতে হয়েছে। ভাই-বোনদের পড়াশোনা করানোর দায়িত্ব ছিল আমার ঘাড়ে। কিন্তু তারপরও তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না করতে পারার আক্ষেপ রয়ে গেছে। এই সময়ে আর লেখাপড়ারও সুযোগ পাইনি।

বেলায়েত শেখের তিন সন্তান। ১৯৯৪ সালে তার প্রথম ছেলের জন্ম। বিরতি দিয়ে সে এখন গাজীপুরের একটি কলেজে অনার্সে পড়ছে। মাওনা চৌরাস্তায় তাকে স্যানেটারির দোকান করে দিয়েছেন। সম্প্রতি তাকে বিয়েও করিয়েছেন। একমাত্র মেয়ের জন্ম ১৯৯৯ সালে। ইচ্ছে ছিল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। সেজন্য রাজধানীর নামকরা কলেজে ভর্তিও করিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে সেখানে পড়াশোনা না করেই গ্রামে চলে যায়। সেখানে এইচএসসি শেষে একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়। সে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত পড়েছে। এরপর তার বিয়ে দেন। তার ছোট ছেলের জন্ম ২০০৫ সালে। সে এ বছর বেলায়েত শেখের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেতে সবার দোয়া চেয়েছেন বেলায়েত শেখ। তিনি দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, দেশবাসীসহ সকলের ভালোবাসার কাছে চিরঋণী আমি। একই সঙ্গে দোয়া চাই আমি।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করার স্বপ্ন আছে আমার। এ কারণে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম।

তবে এই ইউনিটে আসন সংখ্যা কম, তাই ভর্তিযুচ্ছে টিকে থাকা নিয়ে কিছুটা শঙ্কার মধ্যেও আছেন বেলায়েত। তিনি জানান, বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটেও ভর্তি দেওয়া যেত। তবে কয়েকজনের পরামর্শে আমি শুধু ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তির ফরম পূরণ করি। এখন শুনি এই ইউনিটে আসনসংখ্যা কম। সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনার স্বপ্ন ও সবার দোয়ায় আমি কাল পরীক্ষায় বসবো। এজন্য দোয়া চাই।