গিলের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে সবার আগে প্লে-অফে গুজরাট

ক্রিকেট
সবার আগে প্লে-অফে গুজরাট  © ক্রিকইনফো

শুভমন গিলের আগুনে সেঞ্চুরি, সাই সুদর্শনের নির্ভরযোগ্য ব্যাটিং, বল হাতে মহম্মদ শামি, মোহিত শর্মাদের বিস্ফোরণ- সব মিলিয়ে সোমবার ঘরের মাঠে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ৩৪ রানে হারিয়ে ২০২৩ আইপিএলের প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফে পৌঁছে গেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্স। আর হেরে প্লে-অফের স্বপ্নে ইতি টানল সানরাইজার্স।

লড়াইটা এ দিন মূলত দুই দলের বোলারদের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি হল। প্রথম ইনিংসে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলারদের দাপট। তার মাঝেই অবশ্য স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিল শুভমন গিল এবং সাই সুদর্শনের ব্যাট। দ্বিতীয় ইনিংসে গুজরাট টাইটান্সের বোলারদের আগুন। যার জেরে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেল সানরাইজার্স। তার মাঝেই হেনরিখ ক্লাসেনের অনবদ্য পারফরম্যান্স জ্বলজ্বল করছিল। তবে ক্লাসেনের ৪৪ বলে ৬৪ রানও শেষ রক্ষা করতে পারল না। দুই ম্যাচ বাকি থাকতে প্লে-অফের লড়াই থেকে ছিটকে গেল নিজামের শহরের দলটি। টাইটান্স আবার জিতে লিগ তালিকার প্রথম দুইয়ের মধ্যে থাকাটা নিশ্চিত করে ফেলল।

পড়ুন>>> ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগে শীর্ষ তিনে থেকে শেষ করলো বাংলাদেশ

টাইটান্সের দেওয়া ১৮৯ রা তাড়া করতে নেমে একেবারে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ল সানরাইজার্সের ইনিংস। ৫০ হওয়ার আগেই ৬ উইকেট তারা হারিয়ে বসে ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, রবিবার রাজস্থান রয়্যালসের মতোই অবস্থা হবে। যে ভাবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ৫৯ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল রাজস্থান, সেই রকম অবস্থার মুখেই এ দিন প্রায় পড়েছিল হায়দরাবাদের দলটি। তবে হেনরিখ ক্লাসেন সে রকম অঘটন ঘটতে দিলেন না। তাঁকে কিছুটা সঙ্গত করেন ভুবনেশ্বর কুমার। ২৬ বলে ২৭ করে লড়াই চালিয়েছিলেন ভুবি। শেষে মায়াঙ্ক মার্কন্ডেও ৯ বলে অপরাজিত ১৮ রান করে কিছুটা চেষ্টা করেন। তবে হায়দরাবাদকে ৩৪ রানে হারতেই হল।

সোমবার টস জিতে গুজরাট টাইটান্সকে ব্যাট করতে পাঠান এডেন মার্করাম। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই বড় ধাক্কাটা দেন ভুবনেশ্বর কুমার। শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরেন ঋদ্ধিমান সাহা। টাইটান্সও তখন রানের খাতা খোলেনি। তবে সেই ধাক্কা সামলে সাই সুদর্শনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শুভমন গিল। দ্বিতীয় উইকেটে তারা ১৪৭ রান করে। এই জুটি যখন খেলছিল, তখন মনে হচ্ছিল ২৩০ মতো করে ফেলবে টাইটান্স।

তবে মার্কো জানসেন সাই সুদর্শনকে সাজঘরে ফেরানোর পরেই ধস নামে টাইটান্সের ব্যাটিংয়ে। ৩৬ বলে ৪৭ করে সাই সুদর্শন টি নটরাজনকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তখন ১৪.১ ওভারে টাইটান্সের স্কোর ২ উইকেটে ১৪৭। সেখান থেকে ২০ ওভারে ১৮৮ রানে পৌঁছতেই আরও ৭ উইকেট হারিয়ে বসল গুজরাটের দল। তবে এ দিন আইপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফের নজর কাড়লেন শুভমন গিল। শেষ ওভারে ভুবির বলে আউট হওয়ার আগে তিনি ৫৮ বলে ১০১ রান করে ফেলেছিলেন। তাঁর ইনিংসে রয়েছে ১৩টি চার এবং একটি ছক্কা। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকতে হয়েছিল। সে বার শতরানের খুব কাছে থেমে যেতে হয়েছিল। এ বার তিন অঙ্কে পৌঁছে আক্ষেপ মেটালেন শুভমন। ৫৬ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তরুণ তারকা।

যে উইকেটে শুভমন-সুদর্শনরা দাপুটে ব্যাটিং করলেন, সেখানেই হার্দিক পাণ্ডিয়া (৮), ডেভিড মিলার (৭), রাহুল তেওয়াটিয়া (৩), রশিদ খান (০), নুর আহমেদ (০), মহম্মদ শামি (০) একেবারে বানের জলেই যেন ভেসে গেলেন। মনে হচ্ছিল আলাদা পিচে খেলছেন হার্দিকরা। শুভমন-সুদর্শন খেলছিলেন যখন, তখন গুজরাট টাইটান্সকে দেখে মনে হয়েছিল, ২০০ পার করে বড় ইনিংস গড়বে। কিন্তু সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলাররা তা হতে দিল না! টাইটান্সকে ৯ উইকেটে ১৮৮-তেই থামতে হল। শেষ ৩৫ বলে হয় মাত্র ৪১ রান। পড়ে ৭ উইকেট। এ দিন সানরাইজার্সের ভুবনেশ্বর কুমার একাই গুজরাটের ৫ উইকেট তুলে নেন। এ ছাড়া মার্কো জানসন, ফজলহক ফারুকি, টি নটরাজনরা নেন ১টি করে উইকেট।

রান তাড়া করতে নেমে হায়দরাবাদের অনমোলপ্রীত সিং (৫), অভিষেক শর্মা (৫), এডেন মার্করাম (১০), রাহুল ত্রিপাঠি (১), সরবীর সিং (৭), আব্দুল সামাদ (৪), মার্কো জানসেনরা (৩) একেবারে ল্যাজেগোবরে হন। মনেই হচ্ছিল না, একই পিচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শুভমন গিল। যার খেসারত ম্যাচ হেরে দিতে হল সানরাইজার্সকে। অষ্টম উইকেটে হেনরিখ ক্লাসেন এবং ভুবনেশ্বর কুমার ৬৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিল। তবে নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। টাইটান্সের মহম্মদ শামি এবং মোহিত শর্মা ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। এক উইকেট নিয়েছেন যশ দয়াল।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ