পবিপ্রবিতে জুতা পায়ে প্রভাতফেরি, বিতর্কের মুখে শিক্ষক-কর্মকর্তা!
- মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
- প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৭ PM , আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৭ PM
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে গিয়ে দিনের আলোয় জুতা পায়ে দিয়ে প্রভাতফেরির নামে ভাষাশহীদদের অশ্রদ্ধা ও অবমাননার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক -কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ সুশীল সমাজের লোকজন চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২১ শে ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার) সকাল ৭ টায় অনুষ্ঠিত প্রভাতফেরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত খালি পায়ে থাকলেও একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে জুতা পায়ে দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ফজলুল হক, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ মনিরুজ্জামান, শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম, শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আতাউর রহমানকে প্রথম সারিতে জুতা পায়ে দিয়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসে এমন কর্মকান্ড সরাসরি শহীদদের প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে এ ধরণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার প্রভাতফেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জুতা পায়ে দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি মঙ্গলবার শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, প্রভাতফেরি, কালো ব্যাজ ধারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের সময় সঞ্চালক একাধিকবার খালি পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করলেও বেশ কয়েকজনের জুতা পায়ে অংশগ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে জাতীয় দিবসে যদি এ ধরণের কর্মকান্ড ঘটে তবে কি শিখবে অন্যরা?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ ধরণের অবমাননা শুরু থেকেই হয়ে আসছে। ভাষা শহীদদের প্রতি শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এরকম কর্মকান্ড কখনোই কাম্য নয়।
যদিও একাধিক জায়গার ছবিতে তাকেসহ অন্যান্যদের পায়ে জুতা দেখা যায় তরপরেও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আতাউর রহমান বিষয়টি আংশিক স্বীকার করে বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, কনস্ট্রাকশনের কাজ চলাতে শুধু ওই জায়গাটায় আমাদের অনেকেই জুতা পায়ে দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ড. ফজলুল হককে জুতা পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেয়ে ভাষা শহীদের স্বরণ করে আসছি। তবে আজ যেটা হয়েছে সেটা একদমই ঠিক হয়নি, আমার কিছু শারিরীক সমস্যা রয়েছে যার কারনে খালি পায়ে হাঁটা কিছুটা কষ্টসাধ্য এজন্যই বাধ্য হয়ে জুতা পরেছি।
শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি অন্যায় হয়েছে, কোন ভাবেই জুতা পায়ে দিয়ে এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি ভবিষ্যতে এ বিষয়টির ব্যাপারে সতর্ক থাকবো।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রভাতফেরীতে জুতা পায়ে অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনের অপর প্রভাতফেরীতে চিত্রটি ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের খালি পায়েই প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। অনেকে এমন একটি জাতীয় বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। যদিও অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে, কিন্তু শহীদদের স্বরণে এমন একটি আয়োজনে সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত।