০৬ মার্চ ২০২৩, ১০:০৩

‘এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে’ প্রভোস্টকে কুবি ছাত্রলীগ নেত্রী

ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মাহজাবিন  © ফাইল ফটো

এই হল আমার, আমার কথাতেই হল চলবে। যাকে যেখানে খুশি সিট বরাদ্দ দেব। আপনাকে এই হলের দায়িত্ব কে দিয়েছে?’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমানের উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মাহজাবিন। ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেখ হাসিনা হলের এক শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হল পরিদর্শনে যান প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান। সমস্যা সমাধানে কথা বলতে গেলে তার সঙ্গে এমন আচরণ করেন ফাইজা।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা হলের ২১৪ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রেয়সী সানার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে ২১৬ নম্বর কক্ষের একটি সিট বরাদ্দ দেন প্রভোস্ট। শনিবার নতুন সিটে উঠতে গিয়ে ওই ছাত্রী দেখেন, সেখানে রায়হানা আনজুম মিম নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। প্রেয়সী বিষয়টি প্রক্টরকে জানালে তিনি হলে এসে মিমের কাছে সেখানে অবস্থানের কারণ জানতে চান। এ সময় কাজী ফাইজা মেহজাবিনের নাম বলেন মিম। এর সূত্র ধরে ফাইজার কাছে প্রক্টর বিষয়টি জানতে চাইলে ক্ষুব্ধ হন এই ছাত্রলীগ নেত্রী। সাফ জানিয়ে দেন, তার কথাতেই হল চলবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফাইজার এমন আচরণ নতুন নয়। ভাবুন, একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ করলে আমাদের সঙ্গে সে কী করে! হলের সবাই তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না।’ 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা হাউস টিউটর মো. আল আমিন বলেন, ‘প্রভোস্টের সঙ্গে ফাইজার আচরণ শিক্ষার্থীসুলভ নয়।’ 

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন কাজী ফাইজা মেহজাবিন। তিনি বলেন, ‘স্যারকে এ ধরনের কোনো কথা বলিনি। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, এই হল তো আমারও।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘প্রভোস্ট স্যারও নাকি ছাত্রলীগ সম্পর্কে বাজে কথা বলেছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব। ফাইজা যদি এমন কিছু বলে থাকে, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’ 

প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান বলেন, ‘হলে কোন শিক্ষার্থী উঠবে আর কোন শিক্ষার্থী উঠবে না, এই এখতিয়ার হল প্রশাসনের। একজন শিক্ষার্থী তো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যে হল সংস্কৃতি আমরা তৈরি করতে চাচ্ছি সেটি শুধু ফাইজার জন্য সম্ভব হচ্ছে না।’ 

গত বছরের ৩১ জুলাই শেখ হাসিনা হলের উদ্বোধন করা হয়। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ভাইবা নিয়ে সিটে ওঠানো হয়। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের বরাদ্দকৃত সিট না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ফাইজার বিরুদ্ধে। পরে এসব সিটে নিজের পছন্দের ছাত্রীদের তোলেন তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলেন, ’আমাদের হল প্রশাসন সিট দিয়েছে। কিন্তু ফাইজার কথা হচ্ছে, সিট রাখতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে।’ 

কোনো শিক্ষার্থী পাঁচ থেকে ১০ দিনের জন্য বাড়ি গেলে তার সিটে অন্য কাউকে তুলে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শেখ হাসিনা হলে কোনো গণরুম নেই। তবে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে হলের গেস্ট রুমকে গণরুম বানাতে চান ফাইজা। হল শাখা ছাত্রলীগের সংক্ষিপ্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, যতদূর জানি এ নিয়ে প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে ফাইজার কথা কাটাকাটিও হয়েছে। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই ছাত্রলীগ নেত্রী। 

প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ’অনেক মেয়ে নানা সময়ে তার বিষয়ে অভিযোগ করেছে। তাদের বলেছি, লিখিত দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। কিন্তু পরে অসুবিধা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তারা আর লিখিত দেয়নি।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ’হল চালাবে প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা এখানে আসবে কেন? বিষয়টি আলোচনা করে দেখব।’