ঢাবি শিক্ষার্থী জোবায়েরকে পেটায় ভয়ঙ্কর গ্যাং- প্রলয়

ঢাবি
  © মোমেন্টস ফটো

গতকাল শনিবার (২৫ মার্চ) রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দিন হলের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনকে মারধরকারী শিক্ষার্থীরা একটি ভয়ঙ্কর গ্যাং এর সদস্য বলে জানা গেছে। ভয়ঙ্কর ওই গ্যাং এর নাম ‘প্রলয়।’

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০২০-২১ সেশনের একদল শিক্ষার্থী ‘প্রলয়’ নামের একটি গ্রুপ তৈরি করেছেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরের পাশে ‘নিকুম্ভিলা’ নামক স্থানে তাঁদের নিয়মিত আড্ডা ও মাদক সেবনের আসর বসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ তাঁদের  কার্যালয়।

এই গ্রুপে আছেন—শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের হেদায়েতুন নুর, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ, ইতিহাস বিভাগের বদরুজ্জামান সজীব, মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব হাসান জয় ও মোহাম্মদ শোভন, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগের শাহ আলম, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের তৌসিফ তাহমিদ অর্পন ও নাজমুল হোসাইন, কবি জসীমউদ্দিন হল ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের তাহমিদ ইকবাল মিরাজ, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান।

এছাড়াও, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মাহিন মুনাওয়ার, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নের তবারক, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজেমেন্টের সিফরাত সাহিল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অর্ণব খান। এরা গ্রুপে সবচেয়ে প্রভাবশালী। আবার সবাই ছাত্রলীগের হল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

নাজমুল হোসাইন, তৌসিফ তাহমিদ অর্পণ ও মাহিন মুনাওয়ার ছাত্রলীগের হল শাখার পদে রয়েছেন। নাজমুল ও তৌসিফ মাস্টারদা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। আর মাহিন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সদস্য। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবায়ের বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, ‘আমাকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হয় যে তুই কই আছিস বল। তখন আমি বললাম জিয়া হলের দিকে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জন ছেলেপেলে এসে আমাকে বেদম প্রহার করতে থাকে। উপর্যপুরি কিল ঘুষি এবং ইট দিয়ে আঘাত করে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। ফিল্মি কায়দায় পেটানো হয় আমাকে।'

তিনি আরও বলেন, ‘কার্জন হলের সামনে অভিযুক্তরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালাচ্ছিল। তিনি এভাবে বাইক চালাতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। যার কারণে আমাকে এভাবে তারা মারধর করে।’

এ ঘটনার পর জোবায়েরকে উপস্থিত লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করায়। তার পুরো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘প্রশাসনকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি যথোপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ভূমিকা রাখবে।’

এ ঘটনায় হল প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল এলাকায় সবসময় থেকে অপরাধে জড়ায় এমন একটি গ্রুপকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। শনিবার যে ঘটনা ঘটছে সেটা হল প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে, তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’


মন্তব্য