জমি দখল নিয়ে শিক্ষার্থীকে জখম করলেন যবিপ্রবির নৈশ প্রহরী বাদল

যবিপ্রবি
  © ফাইল ফটো

জমির দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাত ৯.৩০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হাতুড়ি, রড ও বাশ দিয়ে মেরে গুরুতর আহত করেন কর্মচারী বাদল ও তার সহযোগীরা।     

ঘটনা জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘটনাস্থল থেকে আহত শিক্ষার্থী মামুনকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন।  

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সম্মুখে অংশীদারীতে ৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মুজাহিদ হাসান। স্থানীয় ওমর ফারুকের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনলেও প্রায় তিন বছর পার হলেও জমিটি বুঝে পাননি তারা। জজি বুঝিয়ে না দিয়ে সম্প্রতি জমি সংলগ্ন অন্য একটি ভবনের ঢালাইয়ের মাধ্যমে ক্রয়কৃত ওই জমির আনুমানিক ৫ ফুট জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে জমির মালিককে বারবার সুরাহা করার বিষয় বললেও কোনো সমাধান মেলেনি। সর্বশেষ জমির মালিক (ক্রয়সূত্রে) মামুন ও মুজাহিদ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে বিচারক জমিটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি আমি ব্যবসা করি আর এর লভ্যাংশ দিয়েই পড়ালেখার খরচ চালিয়ে খুব কষ্ট করে টাকা জমিয়ে অংশীদারত্বে জমিটি ক্রয় করি। আমার ক্রয়কৃত জমি মালিকপক্ষ আমাকে তো বুঝিয়ে দেয় নি উপরন্তু মালিকের ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্মচারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিকিউরিটি সুপারভাইজার বদিউজ্জামান বাদল ও তার সহযোগীরা সম্মুখে ও মুঠোফোনে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো। সর্বশেষ জমি বুঝিয়ে না দেওয়ার পরিকল্পনা হিসাবে আমার নিকট আড়াই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বৃহস্পতিবার রাতে সিকিউরিটি সুপারভাইজার বাদল, সিকিউরিটি গার্ড সাগর ও তাদের সহযোগীরা আমাকে হাতুড়ি, রড, বাশ দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে এবং পরবর্তীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে সন্ত্রাসী ও বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদলকে। তাছাড়া বর্তমানে হত্যা মামলা সহ বিভিন্ন মামলার আসামি এই কর্মচারী বাদল। তার বিরুদ্ধে আদালতে কয়েকটি মামলা চলমান। বারবার সাময়িক বহিষ্কার ও বিভিন্ন মামলার আসামি হয়েও তিনি এখন স্বপদে বহাল রয়েছেন।

পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী পারভেজ হোসেন বলেন, 'বাদল কর্মচারী হলেও স্থানীয়ভাবে সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত। তার নামে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী হয়ে হঠাৎ করেই একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে মারধর করা খুবই জখন্য কাজ। বাদলের বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীমূলক কাজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভীতিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতি মধ্যে পড়তে হয়। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক শারিউল ইসলাম বলেন, 'মামুনকে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করলেও বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। তার মাথায় ও পায়ে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। 

হাসপাতালে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা শুনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিলে বিষয়টা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল আলম বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে


মন্তব্য