ঢাবি ছাত্রকে হত্যাচেষ্টা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ 

ঢাবি
আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থী  © টিবিএম ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মিরহাজুল ইসলাম শিবলীকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার  (৯ মে) বিকেল সাড়ে ৩ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় তারা বাংলাদেশ রেলওয়েকে তিন দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।

দাবি তিনটি হচ্ছে
১.হত্যাচেষ্টাকারীদের কে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
২. এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়েকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি প্রদান করতে হবে এবং ঘটনার পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;

৩.আহত শিক্ষার্থীর সকল চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ, একজন যাত্রী হিসেবে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যতে এধরণের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নাট্য সম্পাদক বর্ণালী ঘোষ বলেন, দরজায় ব্যাগ রাখার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সহযাত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয় শিবলীর। তৎক্ষনাৎ কোনো ঝামেলা না হলেও কালিয়াকৈর রেল ব্রীজের কাছে পৌছালে শিবলীকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সেজন্যই আমাদের এই প্রতিবাদ সমাবেশ। আমরা আমাদের পেশকৃত তিন দফা দাবির আশু বাস্তবায়ন কামনা করছি। 

রিফাত জাহান শাওন বলেন, শিবলীকে যেভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ নতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে, কিভাবে তাদের দাবি আদায় করতে হয়। রেলওয়ের দায়িত্বহীন আচরণের জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে শিবলীর সাথে। আমরা অতিদ্রুত আমাদের তিন দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই। নাহলে এরকম ঘটনা আরও ঘটবে। এসব ঘটনা জানান দেয়, ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়, সাধারণ জনগণও নিরাপদ নয়। 

জিনিয়া ইসলাম বলেন, শিবলী নিজের জীবন নিজে বাঁচিয়েছে।  রেল কর্তৃপক্ষের কি দায়িত্ব ছিলো না তার খোঁজ নেওয়ার?  একঘন্টা পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। একঘন্টার মধ্যে যদি সে মারা যেতো ?  তাহলে কি হতো? 

জিনিয়া ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে ফেলে দিয়ে আহত করার ঘটনাটি আমাদেরকে বর্তমান সমাজের অবস্থা অনুধাবন করতে সাহায্য করে। দুঃখের বিষয় হলো, এখনো বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তারা কোনো মন্তব্য বা মতামতও প্রকাশ করেনি। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যদি শিবলির জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে এগিয়ে না আসে,  ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসার দায়ভার যদি গ্রহণ না করে। তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো। 

উল্লেখ্য যে, গত শনিবার (৬ মে)  মিরহাজুল ইসলাম শিবলী রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে ঈদের ছুটি শেষে ঢাবি ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। ট্রেন চলন্ত থাকা অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ৪১ নম্বর রেলব্রীজের সামনে শিবলীকে ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দেয় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি।

রক্তাক্ত শিবলী  ৯৯৯ এবং ঢাবির সাবেক প্রক্টর গোলাম রাব্বানীকে কল দিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করলে একঘন্টা পর পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে।  বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসারত আছেন। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।


মন্তব্য