অপরাহ্ণের অনিঃশেষ আলোক জাবির ‘তরী’

জাবি
জাবিতে ‘তরী’র উদ্যোগে শিক্ষাদান কর্মসূচীর একাংশ  © টিবিএম ফটো

বিকেল সাড়ে চারটা কি পাঁচটা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  (জাবি) সমাজবিজ্ঞান অনুষদ চত্বর মুখরিত শিশুদের পাঠের শব্দে। সচকিত প্রাঙ্গণ মুখরিত হচ্ছে মুহুর্মুহু অ, আ থেকে জটিল ইংরেজি শব্দের ধাধায়। 

ক্লান্তহীন অপত্য স্নেহে এই সকল শিশুদের পড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলোর আনতে বিরামহীন কর্মচঞ্চল শিক্ষার্থীদের সংগঠন তরীর সদস্য।

‘আলোর পথে আমরা’ স্লোগানকে ধারণ করে ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘তরী’। ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে ২৯তম  ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করে সংগঠনটি।

পাঠগ্রাহী সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের কেউ ক্যাম্পাসে বাদাম, কেউ চা-সিগারেট, কেউ বা কাগজ ও পানির বোতল কুড়িয়ে অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করে। এই সব শিশুর এক এক জন জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। এত কম বয়সেই যাদের জীবন যুদ্ধে নামতে হয়েছে তাদের কাছে পড়াশোনার সক্ষমতা অর্জন করা এক প্রকার হাস্যরস বটে। পড়তে আসা প্রায় সব বাচ্চাদের পরিবারেই অভাব অনটনের সংসার। এদের বেশিরভাগের বাবা ক্যাম্পাসে রিক্সা চালায়, বারের হোটেলে কাজ করে, কেউ হলের ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে কাজ করে, আবার কেউ ক্যাম্পাসে চা সিগারেট বিক্রি করে। এই সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে ‘তরী’ পাঠশালা।

পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, শিক্ষা তহবিলের মাধ্যমে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ, শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাসফর, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করে থাকে সংগঠনটি।

তরীতে নিয়মিত পড়তে আসা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবন্তী আক্তার বলেন, “ভাই, আপুরা আমাদের পড়াগুলো সুন্দরভাবে, সহজভাবে বুঝিয়ে দেয়। কয়েকদিন পর পর আমাদের নতুন বই খাতা দিয়ে থাকে। আমার অনেক খাতা আছে। আবার প্রতিদিন খাবার দেয়, চকলেট দেয়। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের অনেক অনুষ্ঠান হয়। আমরা অনুষ্ঠানে গান গাই, নাচানাচি করি, রচনা লেখি, অনেক অনেক মজা করি।”

শিক্ষাদানকারী ভলিন্টিয়ার গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর জানায়, “মানসিক তৃপ্তি পাই বলে মনের দায়বদ্ধতা থেকেই তরীতে কাজ করতে আসা। অনেক সময় সুবিধা ভোগীদের চেয়ে সুবিধা বঞ্চিতরাই লড়াই করে বিজয়ী হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, এসব শিশুদের যত্ন নিলে তারাও ভবিষ্যতে অনেক এগিয়ে যাবে। সামনের দিনগুলোতেও সংগঠনটিকে আরও বেগবান করতে কাজ করে যাব।”

তরীর সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন রিফাত বলেন, “এবছর আমাদের সংগঠনের ১৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে টি এস সিতে বাচ্চাদের জন্য একটি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করবো। এই লাইব্রেরির একটি সেকশন স্বেচ্ছাসেবীদের জন্যেও থাকবে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবীরাও তাদের জ্ঞানের বিকাশ করতে পারবে। পাশাপাশি তাদের জন্য আমরা কিছু স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছি। যাতে তারা প্রতিযোগিতার বাজারে একটু এগিয়ে যায়।”


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ