উন্নয়ন ফি অভাবে নাজেহাল জাবির বিভাগগুলো, ছাত্র- শিক্ষকদের ক্ষোভ 

জাবি
  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো উন্নয়ন ফি না পাওয়ায় সমস্যার মধ্যে কাজ চালাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার পর বিভাগের উন্নয়নের ফি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার পর উন্নয়ন ফি দেওয়া হয়নি।

দ্রুত উন্নয়ন ফি দেওয়ার জন্য কলা ও মানবিকী অনুষদের সভাপতিরা উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন দিয়েছেন। উপাচার্য এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, "২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে ১৯ কোটি টাকা পেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সে বছরও বিভাগের উন্নয়নের জন্য ফি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ফরম বিক্রির ২২ কোটি টাকা পাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত উন্নয়ন ফি দিতে পারছে না। এই টাকা কোথায় যায়?"

তিনি আরও বলেন, "বিভাগ যে কীভাবে চলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজরে নেই। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার পদে যারা আছে তাদের কোনো কাজ তো থেমে নেই। অথচ বিভাগসমূহের উন্নয়নের জন্য কোনোরকম ফি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।"

"বিভাগের একটা মিটিংয়ের জন্য ৪০০ টাকা বরাদ্দ থাকে মাত্র, আমার বিভাগে শিক্ষক ২৬ জন; এই টাকা একটা মিটিংয়ের জন্য কি যথেষ্ট? বর্তমানে সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বগতিতে আছে। বিভাগের সভাপতির রুম ১৫ বছর আগে যেমন আছে এখনও তেমন। কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন ফি-র টাকা না দিলে তো বাড়ির জায়গা-জমি বিক্রি করে বিভাগ চালাতে পারব না।"

শিক্ষকরা জানান, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সর্বশেষ বিভাগ উন্নয়ন ফি বাবদ ছয় হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন:- জাবির একাডেমিক ফলে এগিয়ে মেয়েরা, পিছিয়ে ছেলেরা

পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগ উন্নয়ন ফি (শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া ছয় হাজার টাকা) বাতিল করে।

ফলে ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সময় আলাদা করে বিভাগ উন্নয়ন ফি দিতে হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির টাকা থেকে যা আয় হয় সেখান থেকে বিভাগের উন্নয়নের জন্য ফি বরাদ্দ দিয়ে থাকে বিভাগগুলোতে।

বিগত দুই বছর সেটাই হয়ে এসেছে; কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার বেশ কয়েক মাস পার হওয়ার পরও বিভাগের উন্নয়নের জন্য ফি দেওয়া হয়নি।

সাধারণত প্রত্যেক বিভাগে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা হিসাব করে জনপ্রতি ছয় হাজার টাকা হারে এই উন্নয়ন ফি দেওয়া হয়ে থাকে বলে শিক্ষকরা জানান।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। ৬ মাস পার হওয়ার পরও এখনও উন্নয়ন ফি না পাওয়ায় সংকটে পড়েছে বিভাগগুলো।

এদিকে বিভাগসমূহের উন্নয়ন ফি দেওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন দেওয়া হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা। 

তিনি বলেন "গত মাসে উপাচার্য বরাবর কলা ও মানবিকী অনুষদের নয় জন সভাপতির স্বাক্ষরসহ একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। আবেদনে আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিভাগ উন্নয়ন ফি দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে বলেছি।"

"বিভাগের অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করতে গেলে অনেক খরচ হয়। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের প্রাপ্য অংশ না দেয় তাহলে বিভাগ চালানো কষ্ট হয়ে যায়।"

জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন রাকিব আহমেদ বলেন, "প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়কৃত টাকা বিভাগগুলোর উন্নয়নের জন্য দিয়ে থাকে। সেটা একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট, যা বিভাগের উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার এতদিন পরও কোনও এক 'বিচিত্র' কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টাকা দিচ্ছে না। ফলে আমাদের বিভাগ চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, যা একাডেমিক কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করছে।" দ্রুত বিভাগসমূহের উন্নয়ন ফি দেওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি।

এতদিন পার হওয়ার পরও কেনে বিভাগ উন্নয়ন ফি দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ফোনে কথা বলতে চাননি; বরং সরাসরি দেখা করার কথা বলেন। কিন্তু সরাসরি দেখা করার জন্য কয়েকবার কোষাধ্যক্ষের অফিসে গেলেও ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, "বিভাগের উন্নয়নের জন্য যে ফি সেটা এখনও দেওয়া হয়নি। কলা ও মানবিকী অনুষদের সভাপতির দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা এ বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। বিভাগগুলো যেন শীঘ্রই উন্নয়ন ফি পেয়ে যায় সেই চিন্তা আমরা করছি।"

কবে নাগাদ উন্নয়ন ফি দেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, "নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না, তবে যে কোনোভাবে ম্যানেজ করে দেওয়া হবে।"


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ