ভূমিকম্প ঝুঁকি প্রশমনে ঢাবিতে সেমিনার
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩, ০৫:০৭ PM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ০৫:০৭ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের উদ্যোগে ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় পদক্ষেপ নিতে ‘‘কমেমোরেশন অব ১২ জুন ১৮৯৭ গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়াকার টুয়ার্ডজ প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস ফর আর্থকোয়াক রিস্ক মিটিগেশন’’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দেশের সংশ্লিষ্ট উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান এবং একশন এইড বাংলাদেশের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার (সুপার প্রজেক্ট) এ এম নাসির উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান ভূমিকম্পের ঝুঁকি হ্রাসে ভূমিকম্প তথ্য সম্বলিত ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা শীর্ষক গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তাঁর বক্তব্যে ১৮৯৭ সালে সংঘটিত দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকুয়েক' (The Great Indian Earthquake) এর কথা স্মরণ করে বর্তমান বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরেন।
গত ৫ মে তারিখ সংঘটিত ভূমিকম্প বিষয়ে ড. মাকসুদ কামাল বলেন, এই ভূমিকম্পটি কোনো বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইঙ্গিতবহ নয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের তথ্য প্রমাণসহ তিনি দেখান যে, এই ভূমিকম্প পুনঃসংঘটিত হতে প্রায় ৩৫০-৬৫০ বছর সময়কাল প্রয়োজন। তবে একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় যেকোন সময়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হতে পারে।
তিনি অবহিত করেন, দেশে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মত প্রায় ১৩টি ভূতাত্ত্বিক ফাটলরেখা রয়েছে, যেগুলো ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়। সেনা প্রস্তুতি বাড়ানো দরকার। জনসচেতনতা ভূমিকম্প দুর্যোগের বিপদাপন্নতা কমানোর জন্য একটি বড় উপাদান। এইজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন , নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে দুর্যোগ ঝুঁকি সন্নিবেশিত ল্যানডিউজ প্লান (Lunduse plan) প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বহুলাংশে কমানো যাবে। এই Landuse plan এর উপর ভিত্তি করে বিল্ডিং কোড সহজেল অনুসরণ ও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝুঁকি হ্রাস সমন্বিত নগরভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে একশন এইড বাংলাদেশের প্রতিনিধি এ এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভূমিকম্প প্রস্তুতির জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক সমাধান প্রচার করা জরুরি। এ বিষয়ে নগর ঝুঁকি হ্রাস সংক্রান্ত ‘সুপার প্রজেক্ট’ এর কার্যাবলী তিনি তুলে ধরেছেন। এই প্রজেক্টে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকম্প প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য কাজ করে আসছে।
অনুষ্ঠানে ফ্যাকাল্টির ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যার বিষয়বস্তু ছিল “ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ায়"। এ বিতর্কে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে উভয় দলের প্রতিযোগিরা তাদের পক্ষে তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেন। এ বিতর্কের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য উৎস এবং বিদ্যমান ঝুঁকি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে, যা বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত এবং সতর্ক করতে এ ধরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এরকম উদ্যোগ আরও গ্রহণ করা উচিৎ বলে জানান। তিনি নগর ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রে তাঁর মন্ত্রণালয়ের উদ্দ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের প্রতিটি উদ্যোগের সাথে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগের ঝুঁকি বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করে আসছেন।
তিনি বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি সমন্বিত নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বর্তমানে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। ভূমিকম্পের বিপদাপন্নতা কমানোর জন্য তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ঘন ঘন মহড়া পরিচালনার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ভূমিকম্প সংক্রান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সমূহ উপস্থাপন করে বলেন, জাপান সরকার ভূমিকম্পের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে তাঁর মন্ত্রণালয় উদ্ধার-অনুসন্ধানের যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিল্ডিং কোড প্রয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ভূমিকম্প ঝুঁকিকে তাঁর মন্ত্রণালয় বর্তমানে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ঝুঁকি প্রশমন, উদ্ধার-অনুসন্ধান পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।