পাটকাঠি থেকে ছাপার কালি উদ্ভাবন ঢাবির সাবেক ছাত্রের

ঢাবি
সংবাদ সম্মেলন উদ্ভাবক  © সংগৃৃহীত

পাটকাঠি থেকে ছাপার কালির একটি জল-ভিত্তিক ফর্মুলেশন তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তরুণ রসায়ন বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল আজিজ নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা দল।

আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান এর উদ্ভাবক ড. আব্দুল আজিজ।

সংবাদ সম্মেলনে ড. আব্দুল আজিজ জানান, তাদের এই উদ্ভাবনটি উল্লেখযোগ্যভাবে মুদ্রণ শিল্প থেকে নির্গত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কমাতে পারবে এবং মুদ্রণের কালো কালির আমদানি কমিয়ে সর্বোচ্চ অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে। উদ্ভাবিত এ কালি সস্তা এবং উন্নত মানের। যা বাজারে থাকা ঐতিহ্যগত কার্বন কালো ইঙ্কজেট কালির চেয়ে অনেকটা সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং বিকল্প হিসাবে ব্যবহারযোগ্য।

তিনি আরো জানান, তারা বায়োমাস, পাট কাঠিগুলিকে পাইরোলাইজ করার জন্য একটি কাস্টমাইজড পাইলট ফার্নেস ব্যবহার করেছেন, যা জ্বালানী হিসাবে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে পুনর্ব্যবহৃত করে। সাবমাইক্রন কার্বন কণা তৈরির জন্য প্রাপ্ত কার্বনকে আরও বল-মিল করা হয়েছে। এই কণাগুলি জল-ভিত্তিক ইঙ্কজেট কালি তৈরি করতে বায়োকম্প্যাটিবল ইথিলিন গ্লাইকোল এবং আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলের জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত হয়। তারা ক্যানন প্রিন্টার (PIXMA; মডেল: G3420) ব্যবহার করে এ-ফোর আকারের কাগজের অনেক পৃষ্ঠা মুদ্রণ করে উন্নত কালি পরীক্ষা করেছেন এবং বাণিজ্যিক ইঙ্কজেট কালো কালির মত কার্যকারিতা খুঁজে পেয়েছেন। 

এ ছাড়া তার নেতৃত্বে পাটকাঠি থেকে অত্যন্ত স্থিতিশীল এবং ইলেক্ট্রোকেমিক্যালি সক্রিয় ত্রি-মাত্রিক আন্তঃসংযুক্ত গ্রাফিন ফ্রেমওয়ার্ক (3DIGF) তৈরি করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যা কেমিস্ট্রি অ্যান এশিয়ান জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। যাতে সবুজ রসায়ন ব্যবহার করে গ্রাফিন সংশ্লেষণের জন্য একটি সহজ এবং ব্যয়-কার্যকর পদ্ধতি প্রদর্শন করে। এর বাইরে তিনি পাট কাঠি থেকে উচ্চ মানের অ্যান্টিকোরোসিভ আবরণেরও উদ্ভাবন করেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি কেমেস্ট্রি-এন এশিয়ান জার্নালে এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। যাতে কালি ছাপার কার্বন কণার আরও টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা হয়। 

উল্লেখ্য, ড. মো.  আব্দুল আজিজের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার হাসানপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর, দক্ষিণ কোরিয়ার পুশান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ন্যানো ম্যাটারিয়াল বেসড ইলেকট্রো অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেন। এরপর, তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অফ সায়েন্স (জেএসপিএস) ফেলোশিপ লাভ করেন এবং ২০১১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সেখানে গবেষণা চালিয়ে যান। তারপর সৌদি সরকারের আহবানে কিং ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অফ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলের, ইন্টারডিসিপ্লিনারি রিসার্চ সেন্টার-হাইড্রোজেন অ্যান্ড এনার্জি স্টোরেজ (IRC-HES) এর একজন গবেষণা বিজ্ঞানী (সহযোগী অধ্যাপক) হিসেবে কর্মরত আছেন।