ঢাবি ভর্তিচ্ছু ৬৬ শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা দিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ 

ঢাবি
অনুষ্ঠানের একাংশ  © সংগৃৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে প্রথম বর্ষে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে চান্সপ্রাপ্ত ৬৬ জন দরিদ্র ও অস্বচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে ৭ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার ভর্তি সহায়তা প্রদান করেছে 'মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'। 

শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। 

অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনটির সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবী রাজু আহমেদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও কবি জসীম উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ শাহীন খান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবোধ দেব নাথ, ফাউন্ডেশনটির বাংলাদেশ কমিটির ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম ইমন ও তানভীর এহসানুর রহমান, প্রকৌশলী মাসির উদ্দীন শেখ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনটির বাংলাদেশের ভোলান্টিয়ার কো-অর্ডিনেটর মো. শাকিল আনোয়ার। 

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহীন খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পরে একজন শিক্ষার্থীকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়না। একজন মানুষের হিউম্যান অ্যাসেট, ফিজিক্যাল অ্যাসেট, ন্যাচারাল অ্যাসেট, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট থাকে। এদের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো সোস্যাল এসেট, যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরপরই দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। 

একজন শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস তাকে বহুদূর নিয়ে যায় মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি গ্রাম। এখান থেকে শ্রেষ্ঠদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হওয়া যেমন সম্ভব। ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থী এখানে থেকেও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কেননা, এখানে কলেজ জীবনের মতো মা-বাবা শাসন করে না বা শাসন করার মতো কেউ থাকে না। 

বক্তব্য প্রদানকালে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ড. সুবোধ দেব নাথ বলেন, একটি চারা গাছকে পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত করতে শুরুতেই যেমন পরিচর্যা করা হয় ঠিক তেমনি তোমাদেরকে এই 'মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন' আর্থিক সহায়তা করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তত করছে। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কীভাবে ভালো করা যায়, সেটার সর্বোচ্চ চেষ্টা তোমাদের করতে হবে। 

অনুভূতি জানিয়ে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী রিয়াদুস সালেহীন বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়েও এখন পর্যন্ত অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারিনি। তবে সেই শঙ্কা দূর করেছে 'মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন'। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করায় আমি ফাউন্ডেশনের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। 

ভর্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, স্বেচ্ছাসেবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী পূজা দেবনাত বলেন, ভর্তির সময়ে ফাউন্ডেশন এগিয়ে না এলে যারা চান্স পেয়েও ভর্তি হতে পারে না তাদের তালিকায় হয়তো আমার নামটাও থাকতো৷ আমি ফাউন্ডেশনের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। 

দরিদ্রতার কাছে হেরে না গিয়ে দরিদ্রতাকে শক্তিতে পরিণত করে সফলতা অর্জন সম্ভব উল্লেখ করে ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কমিটির ডিরেক্টর আমিনুল ইসলাম ইমন বলেন, দরিদ্রতা সফলতার পথে কোনোভাবেই বাঁধা নয়। এটি একটি শক্তি। এই শক্তি সবার থাকেনা। এসময় তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেন৷ 

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা 'মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন' একটি আমেরিকা ভিত্তিক অলাভজনক, অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশে শিক্ষা, চিকিৎসা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পরিবারের পুনর্বাসন সহায়তা, জরুরি ভিত্তিতে ফ্রী অক্সিজেন সেবাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ করে। বর্তমানে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে মোট ১২টি প্রজেক্ট চলমান রয়েছে।