ঢাবিতে আখতার ও তার কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মামলা নেয়নি শাহবাগ থানা

ঢাবি
আখতার ও তার দলের কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা  © ফাইল ছবি

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও সদ্য প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি'র আহ্বায়ক আখতার হোসেনের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মামলা দায়ের করতে গেলে তা গ্রহণ না করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ থানার বিরুদ্ধে। মামলা না নেয়ায় আগামীকাল বুধবার আদালতে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান ভুক্তভোগী আখতার।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ মোমেন্টসকে আখতার বলেন, আমরা গতকাল সোমবার (৯ অক্টোবর) রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলাম। যাওয়ার পর এজাহারের কপিটা ওসিকে (নূর মোহাম্মদ) দিলাম। উনি এটা পড়ার পর আমরা যারা থানায় গিয়েছি তাদের সবার নাম, বাবা-মায়ের নামসহ সব তথ্য লিখে নিয়ে একটি গোপন কক্ষে গেলেন। এরপর দশ মিনিট পর রুম থেকে বেরিয়ে আসলে আমি বললাম, আমাদের মামলাটি নিবেন কিনা? তখন তিনি বলতেছেন,’ এখানে ছয়-সাত জন অজ্ঞাতনামা আছে।’

আখতার বলেন, ‘তখন আমি বললাম আমি দুইজন হামলাকারীকে চিনেছি তাদের নাম পরিচয় তো উল্লেখ করেছি; তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তখন তিনি (ওসি) বললেন, ‘না এগুলো আরো অনেক ব্যাপার-স্যাপার আছে।’ তখন আমি বললাম, ‘তাহলে কি আমরা আদালতে যাবো? তখন তিনি (ওসি) বললেন, আপনারা আদালতে যান।’ আগামীকাল আমরা আদালতে মামলা করতে যাবো। 

ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এ শিক্ষার্থী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ সংক্রান্ত প্রেস কনফারেন্স আয়োজন শেষে আমি (আখতার), মো. ফয়সাল হাসান, আসাদুল্লাহ আল গালিফসহ আরো ৩/৪ জনসহ দুপুর দেড়টার দিকে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে এসে পৌঁছালে হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীম উদ্দিন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনির নেতৃত্বে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ঋভু মন্ডলসহ আরো অজ্ঞাত ৬/৭ জন মোটরসাইকেলে করে এসে আমাদের পথরোধ করেন। 

হামলার বর্ণনা দিয়ে আখতার উল্লেখ করেন, ঋভু মন্ডল আমাদের দেখে উচ্চস্বরে গালাগালি শুরু করে। রনি চিৎকার করে সবাইকে নির্দেশ দেয় “ঐ তোরা আখতারকে ধর” এবং ঋভু “নতুন সংগঠন খুলছিস তোরা” বলে একহাতে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে এবং অন্য হাতে আমার মুখ বরাবর এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মারা শুরু করে। রনি তখন বলে “আখতার তুই আজকে শেষ, নেতা হইছিস, আজকে তোর নেতাগিরি বের করমু”-একথা বলেই সে আমাকে মাটিতে ফেলে আমার মাথায়, মুখে, বুকে, পিঠে লাথি মারা শুরু করে। রনি ও ঋভুর নেতৃত্বে অজ্ঞাত আরো ৬/৭ জন আমাকে হাতে এবং ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। তখন আমার সাথে থাকা সহচর ফয়সাল, গালিফসহ অন্যরা আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে রনি, ঋভুসহ বাকিরা তাদেরও এলোপাথাড়ি মারতে থাকে।

সাবেক এই ছাত্রনেতা এজাহারে আরো উল্লেখ করেছেন, রনি দুই হাতের আঙ্গুল আমার মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে আমার ঠোঁট টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চেষ্টা করে। আমার ঠোঁট কয়েক স্থানে ছিঁড়ে তখন রক্তপাত শুরু হয়। রনি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার মাথার চুল ধরে; আমার মাথা বার বার রাস্তার সাথে আঘাত করতে থাকে। এতে আমার দাঁত ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। মুখের ভেতর থেকে আর দাঁতের গোড়া থেকে তীব্রবেগে রক্তপাত শুরু হয়। রনির নির্দেশে রনির সাথে থাকা অজ্ঞাত এক সন্ত্রাসী ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আমার রান, পা, গোড়ালিতে আঘাত করতে থাকে। এই সময়ে ঋভু আমার পরিধান করে থাকা পাঞ্জাবির পকেট টেনে ধরে এবং আমার পকেটে থাকা মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি মোবাইল ছিনতাই ঠেকানোর জন্য মোবাইলটা শক্ত করে ধরে রাখলে রনি আমার হাতে পাড়া ও লাথি দিতে থাকে। এতে আমার মোবাইলের ডিসপ্লে ভেঙ্গে যায়। আমার হাত কেটে রক্তপাত হতে থাকে। আমার বাম হাতের কনুই ছিলে যায়। এই সময়ে আমার সঙ্গী গালিফের হাত থেকে ঋভু আমাদের সংগঠনের সদস্য তালিকা সহ অন্যান্য গোপনীয় এবং মূল্যবান দলিলাদি চুরি করে নিয়ে যায়। এসময় রনি ও ঋভুর সাথে থাকা সন্ত্রাসীরা আমার সঙ্গীদের মারধোর করতে থাকে। 

“এই আক্রমন দেখে আমার পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং রাস্তার কিছু পথচারী আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে রনি-ঋভু সহ বাকী সন্ত্রাসীরা দ্রুত তাদের মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। আমার সঙ্গীরা আমাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ আমার চিকিৎসা শুরু করেন, সিটি স্ক্যান, এক্সরে এবং অন্যান্য পরীক্ষা করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে আমার অবস্থা গুরুতর ও আশংকাজনক বর্ণনা করে উন্নততর চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করলে আমার সঙ্গীরা আমাকে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এনে ভর্তি করায়। আমি উক্ত হাসপাতালে তিন রাত ভর্তি ছিলাম”- উল্লেখ করেন আখতার।

এদিকে মামলা না নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদকে ফোন করে কথা বলতে চাইলে তিনি, বলেন বলে সম্মতি দেন। এরপর আখতারের মামলার প্রসঙ্গ বলা শুরু করতেই তিনি বলেন, ‘ভাই পরে কথা বলি একটু- বলেই ফোন কেটে দেন।

উল্লেখ্য, আখতারের ওপর হামলায় জড়িতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে জানা যায়। যদিও সৈকত ও হামলার নেতৃত্বে থাকা রনি বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর কাছে এ হামলার কথা অস্বীকার করেন।