মারধর করে আবারো আলোচনায় প্রলয় গ্যাং, শাহবাগ থানায় মামলা

ঢাবি
আলোচিত সেই প্রলয় গ্রাংয়ের কিছু সদস্য  © ফাইল ছবি

“আমার ছেলের ওপরে যা করা হয়েছে এগুলো কোন মানুষ করতে পারে না; পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। তারা (অভিযুক্তরা) সিগারেট, গাঁজা খেয়ে সেগুলোর আগুন আমার ছেলের মাথা ও গলার বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে রক্তাক্ত করেছে। এগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মত না। তারা কি মানুষ? না তারা জানোয়ার। এখনো আমার ছেলে আইসিইউতে ভর্তি আছে। আমার মনে হচ্ছে আজরাইল আমার ছেলের জীবন নিতে এসেছিল ওখানে কোন একজন ফেরেশতা গিয়ে রক্ষা করে নিয়ে আসছে।”

এভাবেই কেঁদে কেঁদে দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর কাছে নিজের ছেলের ওপরে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নির্যাতিত আলভী আরসলান নামের এক ছাত্রের মা ডা. রেহেনা আক্তার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রলয় গ্যাংয়ের একটি দলের হাতে নির্যাতিত হন আলভী।

এ ঘটনায় গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ডা. রেহেনা আক্তার। মামলার এজাহারের একটি কপি দ্য বাংলাদেশ মোমেন্টস-এর হাতে রয়েছে।

মামলায় নাম আসা শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তবারক মিয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের ও স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ূন। এছাড়াও, অজ্ঞাত আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে ডা. রেহেনা বলেন, গত ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে বসে ছেলে আলভী আরসলান তার বান্ধবীর সাথে গল্প করছিলেন। এমন সময় তবারক, মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের ও জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনসহ ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্থার পর বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করে। ডা. রেহেনার ছেলে (আলভী ) এর প্রতিবাদ করলে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় পৈশাচিক শারীরিক নির্যাতন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা রড, লাঠি ও কাঠ দিয়ে তার বিভিন্ন স্থানে জখম করা হয়। 

তার ছেলের ওপরে হওয়া নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ডা. রেহেনা উল্লেখ করেন, আসামি তবারক তার হাতে থাকা রড দিয়ে আলভীর দেহের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে রক্তাক্ত করে। আসামি মুরসালিন লাঠি দিয়ে আঘাত করে আলভীর ডান হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে ফেলে। মামলার তিন নাম্বার আসামি সাকিব ও আরো কয়েকজন মিলে আলভীর গায়ে জলন্ত সিগারেটের আগুন লাগিয়ে দেয়। জুবায়ের তার পায়ের জুতা দিয়ে আলভীর বুকে ও পিঠে সজোরে আঘাত করে। পাঁচ নাম্বার আসামি জোবায়ের ইবনে হুমায়ূন আলভীর মুখ, মাথা, ঠোঁট ও চোখে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, এরপর তবারক আলভীর পকেটে থাকা আড়াই হাজার টাকা নিয়ে সেখান থেকে সরে যায়। মুরসালিন আলভীর কাছে থাকা পোকো কোম্পানির ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। সবশেষে আলভীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ফেলে অভিযুক্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় আলভীকে ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান ডা. রেহেনা। এখনো আলভী সেখানে ভর্তি আছেন বলে জানান তিনি। এ ঘটনায় মামলা করলে আসামিরা আলভীকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন বলে উল্লেখ করেন ডা. রেহেনা।

তিনি বলেন, “এখন আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তান আগে সুস্থ হোক। সে আইসিইউতে ভর্তি, তবে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আপনারা দোয়া করেন।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “মামলার বিষয়ে জানতে পেরেছি। যেহেতু মামলা হয়েছে, সেহেতু শাহবাগ থানা ব্যবস্থা শাহবাগ। তারা (শাহবাগ থানা) কি ব্যবস্থা নিলো তার প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে উঠানো হবে এবং শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এদিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায় নি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় আলোচনার আসে প্রলয় গ্যাংয়। এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনের মা সাদিয়া আফরোজ খান। ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেন তিনি। যেটির মামলা এখনো চলমান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই গ্যাংয়ের অভিযুক্ত দুই সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করে।


মন্তব্য