ঢাবির প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি সমাধানে উদ্যোগী উপাচার্য
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৫ PM , আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২৯ PM

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী ভোগান্তির অভিযোগ করার পরপরই সেই সমস্যা সমাধানের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কাজে শিক্ষার্থীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, এমন উদ্যোগ নিতেও শুরু করেছেন নতুন উপাচার্য।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকের নম্বরপত্র তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ৬ দিন ঘুরছিলেন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক শিক্ষার্থী সাকিব বিন রশীদ। তার ভোগান্তির সপ্তম দিন সোমবার (১৩ নভেম্বর) প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজ ফেসবুক আইডিতে এক মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন রশীদ। যেই ভিডিওতে তিনি প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা উল্লেখ করেন। সেই সাথে তার ভোগান্তির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
ভিডিওতে রশীদ বলেন, ‘এই পুরো বিল্ডিংটাকে একটা ওয়েবসাইট দিয়ে রিপ্লেস করা সম্ভব। কিন্তু একটা না তিন তিনটা ওয়েবসাইট বানানো হয়েছে। তবুও এই বিল্ডিং রিপ্লেস হয়নি। অনেকগুলো আবেদন আপনি অনলাইনে করতে পারবেন। পুরো প্রসেসটা আবার অনলাইনে না। অনলাইনে করা আবেদনটা আপনাকে আবার প্রিন্টআউট নিতে হবে। তারপর সেটা নিয়ে এ ভবনে সশরীরে ফের আসতে হবে।’
এ ভিডিও প্রকাশের পরেরদিন গতকাল মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) তার সমস্যা সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ নিয়ে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেন রশীদ। ওই ভিডিওতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগের বিষয়টি বর্ণনা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আন্তরিকতায় মুগ্ধ বলেও জানান।
পরের ভিডিওতে তিনি বলেন, প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখে পড়ে। এরপরই নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল রশীদকে তাঁর নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেই সাথে প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা ও প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাদেরকেও তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠান উপাচার্য। এরপর রশীদের অভিযোগ নিয়ে করা ভিডিওটি উপাচার্য সবার উপস্থিতিতে আবার দেখে প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীদের কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা শোনেন। যে যে সেক্টরে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হয় তা রশীদ উল্লেখ করলে উপাচার্য সেখানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এর জবাবদিহিতা চান। আগামীতে যাতে শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবন ও অন্যান্য কাজে কোন ধরনের ভোগান্তি পোহাতে না হয় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।
দ্বিতীয় ভিডিওর একটি অংশে রশীদ আরো বলেন , ‘সমস্যা সমাধানে আমি তাদের আন্তরিক পেয়েছি। আমার মনে হচ্ছে, নতুন উপাচার্য এবং নতুন প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সেবা সহজীকরণে আরও উদ্যোগী হবেন।'
রশীদ বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, “তাদের সাথে (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) আমার কথা হয়েছে যে, কোন কোন জায়গাগুলোতে কাজ করা যায়। এগুলো (সমস্যা) যে রাতারাতি সমাধান করা যাবে তা না। তারা বলেছেন ডিজিটালাইজেশন নিয়ে আরো কাজ হচ্ছে। এখানে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা তারা স্বীকার করেছেন। এটাকে কীভাবে উন্নত করা যায় সেটা নিয়ে তারা কাজ করছেন।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বাংলাদেশ মোমেন্টসকে বলেন, সাকিব নামের যে শিক্ষার্থী একাডেমিক নম্বরপত্র তুলতে এসেছিল তা সে যথাসময়েই পেয়েছে। একাডেমিক নম্বরপত্র তুলতে হলে সকল সেমিস্টারের নম্বরপত্র থাকতে হয়, কিন্তু সাকিবের পঞ্চম সেমিস্টারের নম্বরপত্র ছিলো না। সেজন্য এই নম্বরপত্র তুলতে গিয়ে তাকে হল ও ব্যাংকে যেতে হয়েছে। এজন্য সে মনে করেছে যে এখানে তাকে ভুগতে হয়েছে। কিন্তু একাডেমিক নম্বরপত্রের জন্য তাকে কোথাও যেতে হয়নি। এটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান নিয়ম।
উপাচার্য বলেন, তাকে ডাকার কারণ হলো আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন দুর্বলতা আছে কিনা; আমাদের সংশ্লিষ্ট যারা কর্মকর্তা আছেন এবং যারা আইসিটি, কন্ট্রোলার সেকশনে কাজ করেন তাদের অথবা তারা যে সফটওয়্যার ব্যবহার করেন সেখানে কোন দুর্বলতা আছে কিনা তা জানা। তবে নম্বরপত্র তোলার ক্ষেত্রে আমি তাদের কোনো দুর্বলতা পাইনি। তবে আমি যেটা লক্ষ্য করলাম, আমাদের যারা কর্মকর্তা আছেন বা যারা এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করেন তাদের এটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। অনেকেই জানে না কীভাবে এই সফটওয়্যার হ্যান্ডেল করতে হয়। সাকিব যা মতামত দিয়েছে তার সকল মতামত সঠিক নয় এবং আমরা যেটা অনুধাবন করেছি সেটা হলো আমাদের নম্বরপত্র তোলার ক্ষেত্রে আমাদের ওয়ানস্টপ পদ্ধতি নিশ্চিত করা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাজ অটোমেশনের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, আমরা গতকালের অভিজ্ঞতা থেকে এখন পরিকল্পনা করছি বা এই পরিকল্পনা আমার আগেও ছিলো যে, আমরা পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনে নিয়ে যাবো। সম্পূর্ণ অটোমেশনে গেলে এই অসুবিধাগুলো থাকে না।