রাবিতে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু, দায় কার? 

রাবি
  © ফাইল ছবি

গত ২৬ অক্টোবর সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান হলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইউনুস আলী নামের এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর আগে, গতবছরের ৩১ মে অন্য আরেকটি নির্মাণাধীন অ্যাকাডেমিক ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিক সাগরের মৃত্যু হয়। 

একই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল। তার আগে, ৮ জানুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সংস্কার কাজে ছাদ থেকে পড়ে আরেক নির্মাণ শ্রমিক আলেক আলীর মত্যু হয়। 

দুই বছরের কম সময়ে তিন শ্রমিক ও এক শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ ঝরে গেল। তবে কি সংস্কার কাজ বা ভবণ তৈরির সাথে মৃত্যুর সংখ্যা সমানুপাতিকহারে চলে? এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দায় কার? শ্রমিক মৃত্যুর এসব ঘটনায় ভবনগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান 'মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন’-এর অব্যবস্থাপনা, সেইফটি সরঞ্জামাদীর অভাব ও রাবি প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয়র ছাত্র সংগঠনগুলো।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সংস্কারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না করেই তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন এবং জীবন রক্ষার জন্য কোনো রকম পদক্ষেপ নেয় না প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেরও কোনো চিন্তা নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এহসানুল হক মিলন বলেন, প্রতিবছরই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পিছে নির্মাণ শ্রমিকদের সাবধানতার অভাব ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই মৃত্যুগুলোর পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে গেলেও চলবে না। এসব মৃত্যুর পিছনে তাদেরও দায় আছে বলে মনে করি।  

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উদাসীন, সেখানে নির্মাণ শ্রমিকদের দেখভালের জন্য তাঁরা দায়িত্বশীল কীভাবে হবেন? অন্যদিকে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফার লোভে অনেক সময়ই পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেন না। ফলে মৃত্যুর ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর কেন আরেক শ্রমিকের মৃত্যু হলো? একজনের মৃত্যুর পর কেন তারা সতর্কতা অবলম্বন করলেন না?এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ঠিকাদারদের সমান দায়ভার রয়েছে। এ মৃত্যুর জন্য তাঁরাই দায়ী।

তবে এসব দায় অস্বীকার করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ডিপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম জানান, যত রকম নিরাপত্তা প্রয়োজন তার সবরকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণ কাজের কারিকুলামের বাইরে গিয়ে কাজ করায় সাগর নামের ওই শ্রমিকের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। শ্রমিকদের আরও প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করছে কোম্পানি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা কাউকে বলে আসে না। এটা সৃষ্টিকর্তার হাতে রয়েছে। তারপরও এটা মানতে হবে যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু ভুল আছে। তাছাড়া যারা শ্রমিক তাদেরও কিছু অসতর্কতা রয়েছে। শ্রমিকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। 

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এরকম দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এজন্য আমরা ঠিকাদারদের সাথে আলোচনা করেছি। মিটিংয়ে তাদেরকে আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনাও দিয়েছি। আশা করি, পরবর্তীতে এরকম ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হবে না।"