পাবিপ্রবিতে দেড় যুগেও কাটেনি শিক্ষক সংকট

পাবিপ্রবি
  © ফাইল ছবি

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(পাবিপ্রবি) পাঁচটি অনুষদভুক্ত ২১টি বিভাগে বর্তমান স্থায়ী শিক্ষক সংখ্যা ১৮৪ জন। এদিকে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও এমফিল  প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬,৪০০ জন।বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সাধারণ অনুপাত ১:৩৫ ; যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাহিরে। এদিকে আবার বর্তমান ১৮৪ জন শিক্ষকদের মধ্যে শিক্ষাছুটিতে আছেন ৪৮ জন। সে হিসাবে শতকরা ২৬ ভাগ শিক্ষকই রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে৷ শিক্ষা ছুটিতে থাকা শিক্ষকের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে আরো পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্বব্যাপী উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থ্যাৎ ২০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কমপক্ষে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬,৪০০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৮৪ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার অনুপাত ১:৩৫। এদিকে আবার ৪৮ জন শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। সে হিসাবে সরাসরি পাঠদানের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষক সংখ্যা ১৩৬ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ৬,৪০০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৩৬ জন শিক্ষকের অনুপাত দাঁড়ায় ১:৪৭ । অর্থ্যাৎ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) ৪৯-তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ টি বিভাগের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতে ১৯ বিভাগেই আন্তর্জাতিক মান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুধুমাত্র বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রকৌশল অনুষদভুক্ত ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই) বিভাগ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলছে। এই দুটি অনুষদের বাকি বিভাগগুলো গুণগত মানহীন। এদিকে বাকি তিনটি অনুষদের ( জীব ও ভূ-বিজ্ঞান, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) সবগুলো  বিভাগই গুণগত মানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বাহিরে। ফলে শিক্ষক সংকটে চাপ বেড়েছে বর্তমান শিক্ষকদের উপর। অধিকাংশ বিভাগে ব্যহত হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা। বাড়ছে সেশনজট। করোনাকালীন জটের পরেও শিক্ষক সংকটে জট বৃদ্ধির আশংকা তৈরী হয়েছে। সব মিলিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। 

অধিক সংকটে থাকা বেশকিছু বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ফার্মেসি বিভাগের ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জনই রয়েছেন শিক্ষাছুটিতে। বিভাগটিতে স্নাতকের পাঁচটি ও স্নাতকোত্তরের দুটি ব্যাচের প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন। এদিকে পরিসংখ্যান বিভাগেও ৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৩ জনই শিক্ষাছুটিতে। বিভাগের সাতটি ব্যাচের প্রায় ২৮০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র চারজন।  ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে শিক্ষক আছেন মাত্র চারজন। এছাড়া মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রায় সব বিভাগ এবং প্রকৌশল অনুষদের ইইই বাদে সবকটি বিভাগেই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনুপাতে  শিক্ষক নেই। 

ইউজিসির ৪৮ ও ৪৯-তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে আরো জানা যায় ,গত ২০১৯, ২০,২১ ও ২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে- ৪,৪০৭ জন, ৫৩৭৮ জন, ৫৪৮৭ জন এবং ৬৪০০ জন। এদিকে ২০১৯, ২০, ২১ ও ২২ সালে শিক্ষক সংখ্যা ছিল যথাক্রমে- ১৭৪ জন, ১৭৫ জন,  ১৭৭ জন এবং ১৮৪ জন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ছিল যথাক্রমে- ১:২৫, ১:৩১, ১:৩১ এবং ১:৩৫ । গত বছরগুলোর বিশ্লেষিত তথ্যানুসারে দেখা যায় , বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও আনুপাতিকহারে বাড়েনি শিক্ষক সংখ্যা। ফলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক সংকট দীর্ঘ মেয়াদী আকার ধারণ করে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা অনুসারে, একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা হবে ৪০ ঘন্টা। এই কর্মঘণ্টা কন্টাক্ট আওয়ার এবং নন-কন্টাক্ট আওয়ার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ হবে। ৪০ ঘন্টার মধ্যে একজন শিক্ষক গড়ে ১৩ ঘন্টা ব্যয় করবেন কন্টাক্ট আওয়ার হিসাবে। কিন্তু বিভাগ/ইনস্টিটিউটের প্রধানের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার ৬ ঘন্টা হবে। কিন্তু পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকার ফলে কর্মে নিয়োজিত থাকা শিক্ষকদের টিচিং লোড পড়ছে অতিরিক্ত। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ,শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক শিক্ষক একাধিক কোর্সের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। চাপ বেশি হওয়ায় অল্প ক্লাস নিয়েই শেষ করছেন কোর্সগুলো। ফলে কোর্স শেষ হয়ে গেলেও অজানাই থেকে যাচ্ছে অনেক বিষয়। এদিকে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স শেষ হতে লেগে যায় পাঁচ-ছয় বছর। এছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স (বি.ফার্ম প্রফেশনাল)শেষ করতে সময় লাগছে সাত বছর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বিভাগের মোট ৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জনই শিক্ষাছুটিতে আছেন। ক্লাস-পরীক্ষার দীর্ঘ সূত্রিতায় সেশনজট তীব্র হচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বন্ধুরা পাশ করে বেড়িয়ে গেলেও আমরা আটকা পড়ে আছি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, আমরা ইউজিসির কাছে শিক্ষকের চাহিদা জানালেও বাজেট সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় শিক্ষক পাই না। এবার একশোর উপরে চাহিদা দিলেও পেয়েছি দশ জনেরও কম।

দবিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান জানান, চাহিদার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কয়েকমাস আগেই সাতজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। 


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ