দায়িত্বের প্রথম দিনই ছিনতাইয়ের অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা জাবি প্রক্টরের বিরুদ্ধে

জাবি
  © ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নবনিযুক্ত প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার (২০ মার্চ) বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে রাত ১০ টার দিকে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ নিয়ে প্রক্টর অফিসে যায়। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন নি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের নিজ বিভাগের হওয়ায় ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এসময় বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মীমাংসার জন্য হলের ছাত্রলীগকেও ফোন দেন তিনি। পরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা উপস্থিত হওয়ায় বিষয়টি আর ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, ভুক্তভোগী চার এসএসসি ফলপ্রার্থী শিক্ষার্থী দুটি বাইক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড কলেজের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তাদের পরিচয় জানতে চায়। বহিরাগত জানতে পেরে তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে ধরে নিয়ে মারধর করে। সেখানে ভুক্তভোগীদের আটকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ব্লগিংয়ে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।

ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা ২০২১-২০২২ সেশনের (৫১ ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তারা হলেন ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও পরিসংখ্যান ও উপাত্ত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান নাজিজ, এহসানুর রহমান রাফি।

ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ প্রক্টর অফিসে দিতে গেলে প্রক্টরের রোষানলে পড়েন। ভুক্তভোগীরা বলেন, রাত দশটায় আমরা যখন প্রক্টর অফিসে যাই তখন তিনি আমাদের পাল্টা প্রশ্ন করেন যে ক্যাম্পাসে কেন এসেছি? ক্যাম্পাসে না আসলে তো ছিনতাইয়ের শিকার হতাম না। আমরা লিখিত অভিযোগপত্র দিলে তিনি নেননি। পরে মালামাল উদ্ধার করে উদ্ধারকৃত মালামাল ফেরত পেলাম এমন একটি মুচলেকা লিখতে বলেন। আমরা লিখিত অভিযোগে ‘ছিনতাইয়ের বিচার চেয়ে আবেদন’ লিখলে তিনি তা বাদ দিয়ে আবেদনের বিষয় ‘হারানো মালামাল ফেরত পাওয়া’ প্রসঙ্গে লিখতে বাধ্য করেন। এসময় তিনি আমাদের নেশাগ্রস্ত প্রমাণের চেষ্টাও করেন । পরবর্তীতে সাংবাদিকেরা চলে আসায় বিষয়টি সহজে সুরাহা হয় এবং ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র ফেরত পাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকালকের ঘটনা ঘটার ভুক্তভোগীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। বিকাশের দোকানে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশ্চিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিতে যায়। এসময় ভুক্তভোগীদের দিয়ে জোরপূর্বক অভিযোগপত্রের বিষয় পরিবর্তন করানো হয় এবং তাদেরকে মাদকসেবী হিসেবে অভিযুক্ত করতে চায়।  আমরা ভুক্তভোগীদের ডোপ টেস্ট করাতে চাইলে প্রক্টর স্যার তাতে বাধা প্রদান করে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তারা মাদকসেবী’। এসময় তিনি ক্যাম্পাসে তারা কেন প্রবেশ করল এই বিষয়টি নিয়ে তাদের বকাবকি করতে থাকেন। এমনকি ছিনতাইয়ের ঘটনা পুলিশকে জানাতে চাইলে তিনি তাতে বাধা প্রদান করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ভয় পেয়ে লিখিত অভিযোগ না দিয়েই চলে যেতে চায়।

বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির বলেন, আমি ঘটনা জানতে পেরে ভুক্তভোগীদের আমার অফিসে নিয়ে আসতে বলি এবং রাত ১০ টায় নিজেই অফিসে উপস্থিত হয়ে অভিযোগপত্র গ্রহণ করি। অভিযুক্তরা আমার অফিসে এসে টাকা এবং ক্যামেরা জমা দিয়ে তাদের দায় স্বীকার করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীদের হারানো জিনিসপত্র তাদের নিকট বুঝিয়ে দেই। তবে আমি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া বা মীমাংসা করার কোনো প্রকার চেষ্টা করি নি। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা আমাদের প্রতিবেদন ২৮ শে মার্চ অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটিতে তুলে ধরব এবং তদন্ত প্রতিবেদনের সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।

উল্লেখ্য, এর আগে অধ্যাপক আলমগীর কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রের (টিএসসি) পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় অপরিকল্পিতভাবে পুকুর ভরাট করলে টিএসসিসংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া তিনি ক্যাম্পাসে বিজয় মেলা চালু করেন। সেখানে বহিরাগতদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী দ্বারা ব্যাপক সমালোচিত হন।

এদিকে ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান পোস্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী এই অধ্যাপক বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পদে দায়িত্বরত। তিনি বিভাগীয় সভাপতির পাশাপাশি নতুন হলের প্রভোস্ট ও প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।


মন্তব্য