ঢাবিতে এক ছাদের নিচে সকল রাজনৈতিক দলের মিলনমেলা

ঢাবি
  © সংগৃহীত

দীর্ঘ এক বছর পর এক ছাদের নিচে মিলিত হয়েছে দেশের সব রাজনৈতিক ও ঢাবির সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এতে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন আমেজের। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধীতা ও দ্বন্দ্ব থাকলেও এক ঘরে সকল দলের মিলন যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নের মতো। নানান মত ও দলের সম্মিলিত এই আয়োজন তৈরি করেছে এক ভিন্নধর্মী মিলনমেলার।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকাল সাড়ে চারটায় ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে কিছু সময়ের জন্য এমন চিত্রই দেখা যায়। একই ছাদের নিচে অবস্থান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সব রাজনৈতিক ও সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে  ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন ও সদস্য সচিব নাহিদ হাসান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি (অন্য অংশ) দীপক শীল, সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফসহ সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সমিতির এবারের আলোচনা বিষয়বস্তু ছিল,  শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা। এই বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবির সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুইয়া, ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।


অনুষ্ঠানে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ঢাবি প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, আজকে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আমরা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসুর নির্বাচন যেনো অতি সত্বর দেওয়া হয়৷ তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদের মিটিং করা প্রয়োজন। ক্যাম্পাসের সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের অবাধ নির্বাচন ও বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে৷ হলগুলো রাজনৈতিক সংগঠন কাছ থেকে মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা হোক। 

ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ, শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকারও৷ আমরা বিশ্বাস করি ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাস সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এসময় তিনি  বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাস্টারপ্লান দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, সাংবাদিক সমিতির কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন সঠিক তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করে সংবাদ পরিবেশন করে। এখানে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের লোকদেরকে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে দীর্ঘ সময় নিয়ে আলাদা করে আলোচনা প্রয়োজন। ইফতারের পূর্বমুহূর্তে এতো সল্প সময়ে ছাত্রনেতারা তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে পারবে না। আমরা বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমরা ডাকসু নির্বাচনকে অস্বীকার করি না। ভিসি স্যারের সাথে আলোচনা করে কখন করা যায় এটা জানা যাবে।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন পরিবর্ধিত হয়েছে। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও প্রশাসনের সবাইকে অনুরোধ জানাই, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় আরও উন্নয়ন করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের আস্থার সংগঠন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হয়।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তব্য শুনেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। প্রশাসন চায় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটি শিক্ষার্থীদের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করে। 


“নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ পেলে আমরা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি। তবে এই দায়িত্ব প্রশাসন বা কোনো ছাত্রসংগঠনের একার নয়। এতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করবে। তাহলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেস্ট হিউম্যান রিসোর্স প্রোভাইড করতে পারবো।”

উপাচার্য বলেন, লাইব্রেরি সংস্কার, আবাসন সংকট সমাধানের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি মাস্টারপ্লানের কাজ শুরু হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র পালটে দিতে পারবো এবং শিক্ষার্থীদের অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবো। 

সভাপতির বক্তব্যে সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য দেখি বা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ্য করি না। তবে আজকে ডুজার আয়োজনে সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি। 

সাদী বলেন, আমরা সাংবাদিক সমিতি চাই ক্যাম্পাসে সবসময়ই রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক এবং শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ লাভ করে। এসময় তিনি এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ, সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এবং আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এই আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।


মন্তব্য