নেতার সাথে মনোমালিন্য নাকি মাদকসেবন ?

নিজ বগির কর্মীকে টর্চারের অভিযোগ চবি ছাত্রলীগের ৬ জনের বিরুদ্ধে 

ক্যাম্পাস
  © সংগৃৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের এক কর্মীকে টর্চারের অভিযোগ উঠে এসেছে। বগির নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াসের জন্য সুসম্পর্ক না রাখার জেরে গত সোমবার রাত ১১ টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের ৪৪০ নং রুমে ঘন্টাব্যাপী পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান জয়ের উপর টর্চার চালানো হয়।
 
ভোক্তভোগী জয় জানায় -নেতা ইলিয়াসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ কেন’ এটা বলে তারা আমাকে মারধর শুরু করে। আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা এরকম কিছু ভেবে তারা ষড়যন্ত্র করে আমাকে মারধর করে। রাত ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা আমাকে নির্যাতন করা হয়। আমার শরীরে চেয়ার ভাঙ্গা হয়। ওরা আমাকে লাঠি ,হকি স্টিক ,রড দিয়ে নির্যাতন করে। ছাদ থেকে ফেলে দিতে চাইলে কোনো রকম ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে আসি।এরপর দুজন সিনিয়রের সহযোগিতায় মেডিকেলে যাই। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বেডরেস্টে আছি। ঘটনাস্থলে ১৫-২০ জন থাকলেও সবাই মারধর করেনি। জয় ছয়জনকে উল্লেখ করে তারা হলো-লোকপ্রশাসন বিভাগের আবদুল্লাহ আল জুবায়ের নিলয়, সাংবাদিকতা বিভাগের আলফাত রাব্বাকিয়ান মামুন, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের আতিশ ফয়সাল, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি সরকার, ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিস বিভাগের শাকিল আহমেদ ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের রাসেল রাজ।

তবে অভিযুক্তদের দাবি কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটে নি জয় আগে থেকেই মাদক সেবন ও হলে মাদকদ্রব্য সাপ্লাই দিতো। এই ব্যাপারে বুঝাতে গিয়ে খারাপ ব্যবহার করলে এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়।

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের নিলয় বলেন, ওই ছেলে (আশিকুজ্জামান জয়) মাদকাসক্ত এবং হলে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের আস্তানা তৈরি করে রেখেছে। তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে হলের সিনিয়র জুনিয়র সকলেই বিরক্ত। আমরা বিভিন্ন সময় নানাভাবে তাকে এসব থেকে বিরত থাকতে বলে আসতেছি কিন্তু তিনি কিছুতেই কর্ণপাত করেনা। ঘটনার দিনও আমরা সেশনের (সবাই ১৮-১৯ সেশন) সব বন্ধুরা মিলে তাকে এ নিয়ে বুঝাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে চরমভাবে খারাপ ব্যবহার করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। যার কারণে সেখানে থাকা কয়েকজন রেগে যায় এবং ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

আরেক অভিযুক্ত রাসেল রাজ বলেন, আমরা শুধু কথা বলতে গিয়েছিলাম। মারধরের কোনো উদ্দেশ্যই আমাদের ছিলনা। বাইরে থেকে আমরা কোনো অস্ত্রই নিয়ে যাইনি। তিনি যে লাঠিসোটা ও হকিস্টিকের কথা বলছে তা সম্পন্ন মিথ্যা। তবে এই ঘটনায় উপগ্রুপ বিজয়ের একাংশের নেতা মোঃ ইলিয়াসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আশিকুজ্জামান জয়ের মাদক সেবন ও হলে মাদক ব্যবসার বিষয়টি সামনে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মদের বোতল হাতে এবং মদ্যপ অবস্থার বেশ কয়েকটি ছবি। হলের সিনিয়র জুনিয়র বেশ কয়েকজন তার মাদক সেবন ও হলে মাদক সাপ্লাইয়ের বিষয়টি সত্য বলে জানায়।মাদক সেবনের বিষয় টি অস্বীকার করে জয় বলেন- ছবিটি তার এক বন্ধুর রুমে তোলা। সে কোনো প্রকার মাদক কারবারির সাথে জড়িত না।

সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন -আমি সদ্য নিয়োগ পেয়েছি তাই অনেক বিষয় অবগত নই ‌। তবে এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে প্রক্টরিয়াল বডি।

মারধরের ঘটনায় চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন -গতকাল রাতে ঘটনা জানার পর এফ রহমান হলে সহকারী প্রক্টর পাঠিয়েছিলাম। আজকে সকালে আমিও এফ রহমান হলে গিয়েছিলাম তবে ভুক্তভোগী কোনো একটা কটেজে অবস্থান করাতে দেখা করতে পারিনি। এভাবে কেউ কাউকে মারধর করাটা বড় অপরাধ। ভুক্তভোগী এখনও প্রক্টর অফিসে কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করব।


মন্তব্য