পেনশন প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ঢাবি কর্মচারীদের মানববন্ধন

ঢাবি
  © সংগৃহীত

চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তারা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার বদলে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে এ মর্মে গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

এই প্রজ্ঞাপনকে 'বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন' আখ্যা দিয়ে এর প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

আজ সোমবার (৬ মে) সকাল এগারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনের সামনে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। প্রায় দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শত কর্মচারী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা।

মানববন্ধনে উপস্থিত কর্মচারীদের হাতে আউটসোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ রাখা হোক; এক দেশে দুই নীতি মানি না মানবো না; স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কালো আইন চাপিয়ে দেয়া মানি না মানবো না; বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাই নাই ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে তরিকুল নামের এক কর্মচারী বলেন, আমাদের পেটে যদি ভাত না থাকে তাহলে আমরা কাউকে ছাড় দিবো না। আমাদের পেটে কেউ লাথি দিবেন না। আশা করি আপনি আরো দুইশো বছর নেতৃত্ব দেন কিন্তু আমাদের পেটে লাথি মারবেন না।

চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, সার্বজনীন পেনশন আমরা মানি না। শেখ হাসিনা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন কিন্তু এই পেনশন আমরা তার কাছে  আশা করি না।

মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এক কর্মচারী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির মেহনতি মানুষের জন্য ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে মানুষ ভাবতেন বলেই পেনশন স্কিম দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে এই পেনশন সুবিধা চালু করতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি সমিতির সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই পেনশন প্রথা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ঢাবি মুখ থুবড়িয়ে পড়বে। আমি ঢাবি উপাচার্যের প্রতি অনুরোধ করবো পেনশন স্কিম যাতে প্রত্যাহার করা হয়, তা না হলে আমরা আন্দোলন করবো। 

নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এক দেশে দুই নীতি মানি না, মানবো না। এই পেনশনের নীতিমালা আমরা প্রত্যাখান করছি এবং পূর্বের নীতিমালা বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।

চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. মোবারক হোসেন বলেন, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা বসে থাকে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় সকল আন্দোলনে এগিয়ে এসেছে কিন্তু আজকে আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। 
এই সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ জানানোর জন্য সবাই এগিয়ে আসুন। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে না, এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি।

কর্মচারী সমিতির সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম; সেই সাথে আমাদের কর্মচারীরা পিছিয়ে নেই। 

তিনি বলেন, ঢাবি একমাত্র স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেখানে সবাই অনার্স মাস্টার্স পাশ করা। বিসিএস এ যেখানে রেজাল্ট চাওয়া হয় ২.৫ সেখানে আমাদের ঢাবিতে তৃতীয় শ্রেণীতে ঢুকতে হলে আমাদের রেজাল্ট চাওয়া হয় ২.৭৫ । সুতরাং আমরা মেধার দিক দিয়ে কোন অংশে কম না, অনেক এগিয়ে। আমাদের পে স্কেল চালু না করে উল্টো আমাদের মারার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জাতির জনকের অনেক আন্দোলনের একটি ছিলো এই পেনশন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আপনি এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন। 

এ সময় পেনশন প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ নবম পে স্কেল ঘোষণা করার দাবি জানান সরোয়ার হোসেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ