স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে মানব পতাকা প্রদর্শন করলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা 

ঢাবি
  © টিবিএম

গাজায় দখলদার ইসরাইলের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবিতে মানব পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে “মার্চ ফর প্যালেস্টাইন: সলিডারিটি ফ্রম বাংলাদেশ ’’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় ওয়ান টু থ্রি ফোর ওকুপেশন নো মোর; ওয়ান টু থ্রি ফোর জায়োনিজম নো মোর; ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন; মার্চ ফর প্যালেস্টাইন; ফ্রম দা রিভার টু দা সি প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি স্লোগানে মুখরিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি এলাকা।


সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসালাম বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চলমান। ইসরাইলী জায়নবাদী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের নারী-শিশুসহ সিভিলিয়ানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামীদের পাশে রয়েছি। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি চাই এবং গাজায় চিরতরের জন্য যুদ্ধ বিরতি চাই। বৈশ্বিকভাবে আমরা আজকের এই সমাবেশ ও মানব পতাকা কর্মসূচি থেকে বার্তা দিতে চাই বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আছে। আজকে আমরা এই সমাবেশ থেকে তিনটি সুস্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি। সেগুলো হচ্ছে- গাজায় অবলম্বে গণহত্যা বন্ধ করতে হবে; চলমান এই গণহত্যার প্রতিবাদে আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর যে চলমান আন্দোলনে সরকারের যে নিপীড়ন তা বন্ধ করতে হবে এবং আমরা তা নিন্দা জানাই। আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই গণহত্যায় সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে, এটি বন্ধ করতে হবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ফিলিস্তিন বর্তমানে নিপীড়িতদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা মানে পৃথিবীর সকল নিপীড়িত মানুষের জয়। ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর যেখানে সেখানে সাধারণ মানুষ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা সবাই যেন স্বাধীনতার স্বাদ পায় এটাই প্রত্যাশা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী ও ব্রতী'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন এটা যুদ্ধ নয়, এটি একটি গণহত্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুরু হয়েছে গণহত্যা দিয়ে। উত্তর আমেরিকার মানুষদের গণহত্যা ও জায়গা দখল করে তাদের রাষ্ট্র গঠন করেছে। তাদের দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হত্যা, জুলুম ঢুকে আছে। তারা আজকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছে যেখানে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। আমরা বারবার দেখে আসছি তারা একটার পর একটা জাতিকে ধ্বংস করে আসছে। কিসের ভিত্তিতে করেছে? মিথ্যার দোহাই দিয়ে তারা খুন করেছে। 

তিনি আরও বলেন, আজকে প্যালেস্টাইনের পরাজয় শুধু প্যালেস্টাইনের নয় এটা আমাদের মানবতার পরাজয়। এই যুদ্ধ জাতি-ধর্ম বিরোধী, অর্থনৈতিক শোষণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি যখন প্যালেস্টাইনের খবর দেখি তখন রাতে আমার ঘুম হয় না। নারী ও শিশুদের ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত দেহ দেখে রাতে ঘুমাতে পারি না। এগুলা কি মানুষ যারা এভাবে মানুষ হত্যা করছে? গাজায় ইসরাইলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে। ৩৫ হাজারের বেশি মানূষকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রথম তিন দিনেই পনের হাজারের বেশি হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু। 

অধ্যাপক নজরুল বলেন, এতো বড় বর্বরতা ও নৃশংসতা!
আমরা মানবাধিকারের কথা বলছি অথচ আমাদের চোখের সামনে এতো বড় গণহত্যা হচ্ছে। আশার কথা আমেরিকার তরুণরা আজকে জেগেছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প গঠন করেছে। তাদের ক্যাম্প বুল ডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা দমে যায়নি, এটা আমাদের জন্য একটি আশার সঞ্চার করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করবো নেতানিয়াহুসহ যারা এই গণহত্যায় অংশ নিয়েছে তাদের প্রত্যেকের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমরা দেখেছি সরকার ইসরাইলের সমালোচনা করেছে এটা যাতে বজায় থাকে। আমরা সবাই একসাথে আন্দোলন করতে পারি। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করার কি আছে। সবকিছুতে তো শত্রুতার দরকার নাই। 

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন লেখক ও কলামিস্ট রাখাল রাহা, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।


মন্তব্য