৫ বছরেও ভারমুক্ত হতে পারেননি চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ

চবি
  © টিবিএম ফটো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। যেখানে অধিকাংশ আসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান ও পোষ্যদের জন্য সংরক্ষিত।এমন একটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নেই ৫ বছরের অধিক সময় ধরে, নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক লোকবল। অবকাঠামো উন্নয়নের কাজেও বলার মতো তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ে না।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুই স্তরেই রয়েছে নানাবিধ সমস্যা।২০১৯ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ ফজলুল হকের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন শামসাদ বেগম চৌধুরী। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে দায়িত্বে আছেন নাসিমা পারভীন ও মাধ্যমিক স্তরে সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান -দীর্ঘদিন যাবত আমাদের প্রতিষ্ঠান যোগ্য অভিভাবক পাচ্ছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুই স্তরেই আছেন ভারপ্রাপ্তরা। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ, যোগ্য অধ্যক্ষ থাকাটা অতীব জরুরি। পাশাপাশি উপাধ্যক্ষ ও মাধ্যমিক স্তরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে প্রতিষ্ঠানটির গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হয় প্রতিনিয়ত।পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় স্কুলের শিক্ষক দিয়ে কলেজ সেকশনের ক্লাস নেওয়া হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েক জন খন্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন যাদের চাকরি স্থায়ীকরণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায় প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১৯ জন ও শিক্ষিকা আছেন ২১ জন। বিভিন্ন সময়ে গত ২০ বছরে প্রায় ৩০ জনকে বিষয়ভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিয়োগ প্রদান করা হয় বলে অভিযোগও আছে। যাদের মধ্যে আমাদের শিক্ষকদের আত্মীয়-স্বজনই বেশি। অন্যদিকে কলেজ শাখায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী কোনো শিক্ষক নাই, দশজন খন্ডকালীন আর স্কুল সেকশনের শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে । ২০১২ সালে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চ (আইইআর) প্রতিষ্ঠা করে কলেজের ১৮ জন শিক্ষককে আইইআর এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার ফলে কলেজে শিক্ষকের পদসমূহ বিলীন হয়ে যায়। শর্ত ছিল যে এই ১৮ জন শিক্ষক বিএড ও এমএড ডিগ্রি সম্পন্ন করবেন এবং আইইআর এর ক্লাসের পাশাপাশি কলেজের ক্লাসসমূহও চালিয়ে নেবেন। পরবর্তীতে তৎকালীন প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় সব শর্তই শিথিল হয়ে যায়। অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে নতুন ভবনের অনুমতি পেলেও কাজ চলছে ধীরগতিতে।ফলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত ক্লাস করতে হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাসিমা পারভীন বলেন - অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে আমার জানা নেই,তবে দ্রুত নিয়োগ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। শিক্ষক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন -আমাদের লোকবল সংকট আছে। বাজেট বিষয়ক কিছু সমস্যার কারণে স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া ও নিয়োগ দেয়া হয়নি। দ্রুত সমস্যা টি সমাধান করা হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছেন অধ্যাপক ডঃ আবু তাহের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক জনবানীকে বলেন - যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির স্বতন্ত্র একটি গভর্নিং বডি কমিটি রয়েছে তাই যৌথসভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ডঃ দানেশ মিয়া এখন আর দায়িত্বে নেই।উপ উপাচার্য(শিক্ষা) কে এই ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

গভর্নিং বডি গঠন,অধ্যক্ষ নিয়োগ ও শিক্ষক সংকট নিরসনের ব্যাপারে উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন -এখনো কমিটি গঠন হয়নি, গভর্নিং বডি তৈরি হলে আমি মিটিং কল করে বিষয়টি দেখব।