ক্লাসের সাথে চলবে কুবি শিক্ষকদের দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিও

কুবি
  © ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি  শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২৩ জুন থেকে ক্লাসে ফিরছেন। একই সাথে সকল দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত শিক্ষকরা দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিও পালন করবে। তবে শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহ  যদি আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হয় তাহলে প্রশাসনকে আবারও পূর্বের ন্যায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। শুক্রবার (২১ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মাহমুদুল হাছান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে বিষয়টি জানা যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ জুন অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্তৃক আয়োজিত সাধারণ সভায় শিক্ষকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- আগামী ২৩ জুন থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষকরা  শ্রেণি কার্যক্রমে (ক্লাস, পরীক্ষা ইত্যাদি) অংশগ্রহণ করবেন। তবে শিক্ষকদের দাবিসমূহের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত দুই  ঘণ্টার কর্মবিরতি চলমান থাকবে। এই সময়ে শিক্ষকরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিসহ অন্যান্য প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবেন তবে চূড়ান্ত পরীক্ষাসমূহ উক্ত কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। উল্লেখ্য শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শনিবার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শ্রেণিশিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার অনুরোধ করা হচ্ছে। শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহ সিন্ডিকেট কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দ সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রমে (একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও অন্যান্য সভায়) সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন।

এছাড়া সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালার অসঙ্গতি দূরীকরণ, স্থায়ীকরণে অন্যায্য শর্ত বাতিল করে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে অপোক্ষাকৃত কম মেধাবী ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে বিতর্কিত ও দূরভিসন্ধিমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিলকরতঃ শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহের সিন্ডিকেট কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নতুন নিয়োগ (শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী) কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে অভ্যন্তরীণ (শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী) পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন চলমান থাকবে।

শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যে সকল বিভাগে বিভাগীয় প্রধান ও যে সকল অনুষদে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদেরকে প্রত্যাহার করে আইন অনুযায়ী নতুন বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ দেয়া। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ৫ জুন  সিন্ডিকেট সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উক্ত কমিটিকে ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। কাজেই উক্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত অবৈধ ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানরা শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে এ নিয়োগ কার্যক্রম বিতর্কিত হবে এবং এটি গত ৫ জুন  অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তেরও পরিপন্থী হবে বলে শিক্ষকরা মনে করে। অধিকন্তু গত ২৮ এপ্রিল তারিখে শিক্ষকদের উপর বর্বরোচিত হামলায় অংশগ্রহণকারী বহিরাগত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন মামলার আসামি সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা পদে আবেদন করেছে। ২৮ এপ্রিল  ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রিপোর্ট কবে দাখিল করা হবে তাও শিক্ষকরা জানেন না। শিক্ষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পূর্বেই মাননীয় উপাচার্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং শিক্ষকদের উপর প্রাণঘাতী হামলাকারীরা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পাবে। এমতাবস্থায় শিক্ষকরা আশা প্রকাশ করছেন, শিক্ষক সমিতির দাবির প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট কর্তৃক যে সকল কমিটি গঠন করা হয়েছে সে সকল কমিটির প্রতিবেদন দাখিল এবং শিক্ষকদের দাবিসমূহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নতুন নিয়োগ কার্যক্রম থেকে মাননীয় উপাচার্য বিরত থাকবেন। ইতোমধ্যে যে সকল বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো স্থগিত করে সকল নতুন নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য মাননীয় উপাচার্যকে ইতোপূর্বেও চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা থেকেও অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। তারপরও যদি মাননীয় উপাচার্য তাঁর হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নতুন নিয়োগ কার্যক্রম চালু রাখেন, শিক্ষকরা তা কিছুতেই মেনে নেবেন না এবং সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবেন মর্মে সাধারণ সভায় সর্বসম্মাত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শিক্ষক সমিতির দাবিসমূহ আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সিন্ডিকেট কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হলে এবং দাবি আদায়ে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের প্রহসনের আশ্রয় গ্রহণ করা হলে শিক্ষকগণ সাধারণ সভা আহ্বানের মাধ্যমে পুনরায় পূর্বের ন্যায় সর্বাত্মক আন্দোলন ও লাগাতার কর্মসূচি গড়ে তুলবেন।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ