আবারো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কবলে পড়বে জাহাঙ্গীরনগর!
- জাবি প্রতিনিধি;
- প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ PM , আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, দুই প্র-ভিসি, ট্রেজারার, প্রভোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছে আওয়ামী লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষকরা। তারা এখন পলাতক। এই শূন্য পদে বসতে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। বিগত বছরগুলোতে দলীয় সমমনা প্রার্থীরা শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে প্রাধান্য পেয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। তাই শিক্ষার্থীরা চায় অন্তত এই সরকারের আমলে একজন দক্ষ, নিরপেক্ষ, শিক্ষার্থীবান্ধব, কেউ চেয়ারে আসুক। এজন্য সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে যোগ্য প্রার্থীকে। এদিকে আওয়ামীপন্থি, বিএনপিপন্থি, বামপন্থি শিক্ষকরা নিজ দলীয় পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে লবিং করে যাচ্ছে। একজন এগিয়ে গেলে আরেকজন দলীয় প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিষাদাগার করছে অপর প্রার্থীকে। ফলে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্যই রয়েছে। এতে প্রশাসনিকভাবে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে ইতোমধ্যে বিএনপিপন্থিরা তলে তলে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে ফেলেছে। কে কোন চেয়ারে বসবে, কাকে চেয়ার থেকে সরানো হবে তার নকশা এঁটেছে তারা। ভিসি পথে বিএনপি পন্থিরা আসার অপেক্ষায় বসে আছেন তারা। এদিকে ছাত্রলীগ চলে যাওয়া কিছুটা স্বস্তিতে বসবাস করছে শিক্ষার্থীরা। তাবে ইতিমধ্যে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে । ১০ ব্যাচ সিনিয়র ছাত্রদলের উপস্থিতি শংকার সৃষ্টি করেছে। দলীয় ব্যানারে প্রোগ্রাম না করলেও ছোট ছোট বৈঠক করে কর্মী সংগ্রহ করছে তারা। তারাও অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপিপন্থি প্রশাসনের। এর আগে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জাবি শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতুকে হামলার পরিকল্পনা করে। তাদের মেসেঞ্জার গ্রুপের চ্যাট ফাঁস হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এখনও দলীয় কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জিতুর উপর হামলা মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্মকে কীভাবে বিতর্কিত করা যাবে এই নিয়ে বাবর গ্রুপ শিক্ষকদের সাথে কথা বলবেন বলে আলোচনা হয় গ্রুপে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
এদিকে সাভারে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছে জাবি ছাত্রদলও। এরই মধ্যে শিল্পকারখানার ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, জমি দখল, চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম এসেছে। এমনকি মামলার আসামি নির্ধারণেও প্রভাব বিস্তার করছেন তাঁরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মাধ্যমে বামপন্থিরা প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক নেটওয়ার্ক নিজেদের কাজকর্মের মাধ্যমে আন্দোলনের অন্যতম কারিগর দাবি করতে শুরু করেছে। তবে নিজ আদর্শিক সংর্কীণতার কারণে তারা সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দুরে সরে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি,তারা মুখে নীতিবাক্য ঝাড়লেও নিজ আদর্শের বাইরে অন্যদের ‘মূল্যায়ন’ করেন না।
এদিকে আওয়ামীপন্থিরাও ক্ষমতায় বসতে গোপনে গোপনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা উপদেষ্টার ভাগ্নি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরার মাধ্যমে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের লিস্ট পাঠিয়েছেন তিনি। লিস্টটি প্রকাশ্যে আসলে ব্যাপক সমালোচনায় পড়েন তিনি । আওয়ামীলীগের সাথে লিয়াজু আছে এমন শিক্ষকদের নাম পাঠিয়েছেন তিনি। তারা হলেন অধ্যাপক শরিফুল হুদা, অধ্যাপক শাহাদাত হোসাইন, অধ্যাপক পারভীন জলি, অধ্যাপক আশরাফুর মনিম নেহাল।
ভিসি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বামপন্থিদের মধ্যে অধ্যাপক আনিছা পারভীন জলি, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, আওয়ামীপন্থীর মধ্যে অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, বিএনপিপন্থীর মধ্যে অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার টিটু, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুর রব। এছাড়াও নিরপেক্ষভাবে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক সালেকুল ইসলামসহ আরো কয়েক শিক্ষকের নাম শোনা যাচ্ছে।
জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলেন, একজন সৎ-সাহসী, দক্ষ প্রশাসনই পারে বিশ্ববিদ্যালয়কে তাঁর নিজ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সরকার বারবার নিজ দলীয়দের নিয়োগ দিয়ে কলুষিত করেছে ক্যাম্পাসকে। ফলে সুবিধা পেতে ছাত্র-শিক্ষক দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িয়েছে। ড. ইউনূসের উচিত পরীক্ষামূলকভাবে এইবার অত্যন্ত একজন নিরপেক্ষ প্রশাসনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর যদি তেমন কাউকে না পাওয়া যায় তাবে দল থেকে ভাবা যেতে পারে। তবে তাদের দলীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।