গলাচিপায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী 'দয়াময়ী মেলা' অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালী
  © টিবিএম ফটো

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দী ইউনিয়নের সুতাবাড়িয়া গ্রামে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর পাড় ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের বেশি পুরনো ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী কালি মন্দিরের মাঘে সপ্তমী মেলা হাজার হাজার দর্শনার্থীদের কোলাহলপূর্ণ উৎসব মুখর ও মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ভোর ৬ টা থেকে কালী পুজা ও শিব পুজা পালনের মধ্য দিয়ে এ মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। 

ভোর থেকে সন্ধা পর্যন্ত ঢাক-ঢোল, শঙ্খ সহ বিভিন্ন বাদ্য-বাজনা, মেলায় আগত ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীদের মুহুর্মুহ কলরবে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গন। পূন্য লাভের আশায় মানত পূর্ণ করতে  মেলায় অনেক শিশুর বাৎসরিক মাথা ন্যাড়া করা হয়। এছাড়া মেলার কালী মন্দিরে পাঠা বলিদান ও শিব মন্দিরে মোমবাতি, আগরবাতি প্রজ্বলন, ধুপ, চিনি ও মিষ্টি সামগ্রী দেয়া হয়। 

এই মেলায় রঙ বেরঙের আকর্ষণীয় বিভিন্ন খেলনার দোকান, পল্লীবাসীদের স্বহস্তে তৈরিকৃত বুনন শিল্পের সামগ্রী, বাশ বেতের তৈরি সামগ্রী, গৃহস্থলীর ব্যবহার্য তৈজস পত্রের পণ্য সামগ্রী, মাটির তৈরি বাসন-কোসনের হরেক রকম দোকান, মিষ্টির দোকান, ফল-ফলাদির দোকান ও বিভিন্ন আইটেমের খাবারের দোকান দেখা যায়।

ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হাজার হাজার দর্শনার্থীদের আগমনের মধ্য দিয়ে মেলাটি তার বিচিত্র রূপ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে শত বছরের ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হিসেবে আজও স্বগৌরবে প্রাণবন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে। দেশ-বিদেশ থেকে অনেক দর্শনার্থীরা এখানে এসে তাদের নয়ন জুড়ায় ও আত্মার তুষ্টি লাভ করেন।

ভোর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের কেনাকাটা চলে। দূর-দূরান্ত থেকে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু, ও নব বধূরা দলবেঁধে পরিবার, বন্ধু, বান্ধব নিয়ে ছুটে আসেন মেলায়। 

মেলা বিষয়ে মন্দির কমিটির সভাপতি বিমল সমদ্দার জানান, দুঃখের বিষয় এই যে, অর্থের অভাবে মেলার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মেলাটির বৃহত্তম আঙ্গিনার অনেক জায়গা আজ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জায়গার অভাবে তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা এক সময়ে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি প্রশাসনিক ও আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। 

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক যুগল কৃষ্ণ দেবনাথ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও মেলা শুরু হয়েছে, তবে নদী ভাঙ্গনের ফলে স্থান সংকুলন না হওয়ায় মেলায় আগত মানুষদের দাঁড়িয়ে থেকে বেশ দুর্ভোগ সহ্য করে মেলার আনন্দ উপভোগ করতে হচ্ছে। অনেক বছরের পুরনো মেলা নদী ভাঙ্গনের কারণে মেলার আঙ্গিনা দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। 

মেলার সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন বলেন, ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মাঘী সপ্তমী মেলাটি যাতে সুন্দর সাবলীল, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, ভাব গাম্ভীর্য, সুশৃঙ্খল, অনাবিল আনন্দ ও উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য আমাদের পুলিশ বাহিনী তৎপর রয়েছে। যেকোন ধরনের অপ্রতিকার ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকে পুলিশ মেলা প্রাঙ্গণে টহলে দিচ্ছে।