যশোরে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডে স্বামী-স্ত্রী সহ  ৪ আসামি  আটক

সারাদেশ
যশোরে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডে স্বামী-স্ত্রী সহ  ৪ আসামি  আটক  © টিবিএম ফটো

যশোরে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের জট খুললেন পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিবিআই) যশোর। যশোরের নোয়াপাড়া, অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী  মাছের ঘের থেকে উদ্ধার হওয়া ইজিবাইক চালক রাশেদ হত্যায় জড়িত থাকায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৪ জনকে আটক করেছেন পুলিশ। 

আটককৃতদের মধ্যে দুইজনকে আটক করেছেন পিবিআই ও অপর দু’জনকে আটক করেছেন র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা। একইসাথে নিহত রাশেদের ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটিও উদ্ধার করেছেন যশোরের র‌্যাব-৬। 

এই হত্যায়  অংশগ্রহণকারী প্রধান আসামি হলেন বাঘারপাড়া উপজেলার বারভাগ গ্রামের মৃত নিজাম উদ্দীন মোল্লার ছেলে  মেহেদী হাসান মিলনকে মুড়লি মোড়  এবং  তার স্ত্রীকে ঝিকরগাছার পারবাজার গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে জান্নাত আক্তার আয়েশাকে ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর থেকে শনিবার আটক করেন পিবিআই। একইদিনে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা আরেক আসামি হলেন অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের কলিম বিশ্বাসের ছেলে রিমন বিশ্বাস বাবুকে বসুন্দিয়া মোড়ে ভাড়াবাড়ি থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া রোববার সকালে যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল এলাকা থেকে অপর আসামি মাগুরা জেলার শালিখা থানার একিন মোল্লার ছেলে বেলাল হোসেনকে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকসহ আটক করেন যশোর র‌্যাব-৬। 

আটককৃত ৪ আসামিকে ৫ই মার্চ রবিবার আদালতে হাজির করা হলে মেহেদী ও তার স্ত্রী জান্নাত আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তাদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পিবিআই , র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ জানায়, আসামিরা আন্তঃজেলা চোর ও ছিনতাই চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন জেলায়  এধরনের অপরাধ প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় কাজের লোক ও ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন লোকের বাড়িতে ঢুকে চেতনা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করে। এরপর বাড়িতে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণ অলংকার সহ বাড়ির মূল্যবান সম্পদ লুট করেন। বিভিন্ন সময় পরিবারের সকলকে অচেতন করে নারীদেরকেও ধর্ষণও করে থাকে এ চক্রটি।

তারই ধারাবাহিকতায় রাশেদের ইজিবাইকটি ছিনতাই করার জন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়।

পিবিআই জানান, আসামি রিমন বিশ্বাস  নিহত রাশেদের ইজিবাইকটি ভাড়া ঠিক করে দেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি মেহেদী ও তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার আয়েশাকে নিয়ে নিহত রাশেদের ইজিবাইকটি রিজার্ভ হিসেবে ভাড়া করেন। এরপর তারা প্রথমে রাজগঞ্জের ঝাঁপা বাওড়ের কাছে ঘুরতে যান। সেখানে ভাসমান সেতুতে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেন। তারপর অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্ৰামের নির্জন  এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মেহেদী হাসান মিলন ইজিবাইক থামিয়ে নিজের কোমরে থাকা বেল্ট খুলে চালক রাশেদের গলায় ফাঁস দিয়ে টেনে ধরে। স্ত্রী আয়েশা তার দু’ পা চেপে ধরে। রাশেদের শরীর যখন নিস্তেজ হয়ে পড়ে মেহেদী হাসান মিলন ও তার স্ত্রী আয়েশা দুজনে লাশটি ঘেরের মধ্যে ফেলে দেয় । পরে সেখান থেকে ইজিবাইকটি নিয়ে শহরের রাজারহাট এলাকায় তার এক বন্ধুর কাছে বিক্রি করে দেয়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই যশোরের এসআই ডিএম নুরজামাল হোসেন বলেন, ঘটনার পর এসআই স্নেহাশিস দাসের নেতৃত্বে একটি টিম আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রাখেন। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে  প্রথমে তারা আয়েশাকে আটক করেন। আয়েশাকে আটকের পর বিভ্রান্ত মূলক  তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। পরে তার স্বামীকেও কৌশলে আটক করা হয়। আটকের পর তারা এ নৃশংস হত্যার ঘটানটি স্বীকার করে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার এম নাজিউর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকেই দ্রুত ছায়া তদন্ত শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আসামি বেল্লালকে আটক করেন। এরপর বেলাল এ ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় । তারা মূলত চুরি ছিনতাইয় ও অজ্ঞান পার্টির সাথে জড়িত। তাদের দলে এরকম আরও চার-পাঁচজন সদস্য রয়েছে। বেলাল জানিয়েছে এর আগেও একাধিকবার তারা এধরনের কাজ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর জসিম উদ্দিনের ছেলে রাশেদ উদ্দিন ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেননি। পরেরদিন সকালে অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী এলাকার একটি মাছের ঘের থেকে গলায় বেল্ট পেঁচানো অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাশেদের বাবা অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায় এঘটনায় অপরাধীরা কেউ পার পাবেনা, সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ