ঈশ্বরদীতে কোরবানীকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে পশুর হাট

চলতি মাসের শেষের দিকেই কোরবানীর ঈদ। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে বসতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ঈশ্বরদী অরোনকোলা পশুর হাট। ঈদকে টার্গেট করে হাটের প্রথম দিনই আমদানি শুরু হয়েছে ছোট-বড় দেশি কয়েক প্রজাতির গরুর। স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরাও হাটে নিয়ে আসা শুরু করেছে তাদের গরু। তবে আমদানি বেশি হলেও চড়া দামে বিক্রি কম হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়াই কোরবানির আগ থেকেই গরুর দাম চড়া হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

বিক্রেতারা বলছেন, সরিষার খৈল, ছোলার ভুষি, খেসারি, মাসকালাইয়ের ভুষি, ধানের গুঁড়াসহ অন্য সব গো-খাদ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুন। লাফিয়ে লাফিয়ে গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারনে এবার গবাদিপশু পালন ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। কিন্তু ক্রেতারা যেসব দাম হাঁকছেন তা খুবই কম। অন্যদিকে ক্রেতারাও বলছেন, এবার পশুর দাম একটু বেশিই।

 মঙ্গলবার(১৩ জুন) ঈশ্বরদী অরনকোলা এলাকার পশুর হাট ঘুরে দেখা যাই, ছোট-বড় ষাঁড়,  বকনা গরু ও শাহিওয়াল জাতের গরুতে পরিপূর্ণ এ হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাপক সমাগম। হাটে পশুর আমদানিও হচ্ছে প্রচুর। তবে বড় পশুর দাম অনুযায়ী ছোটগুলোর দাম একটু বেশি হলেও সাধারণ ক্রেতাকে ছোট গরুই বেশি পছন্দ করতে দেখা গেছে। ৬০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা দামের গরুও উঠেছে প্রথম দিনের এই হাটে।

ঈশ্বরদী অরনকোলা এলাকার আইয়ুব আলী ডেইরি খামারের স্বত্তাধিকারী মোঃ জীবন হোসেন বলেন, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আমার খামারে ছোট-বড় ৫০ টি গরু পালন করেছি। আজকে এই হাটে ১০ টি গরু নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। ক্রেতাদের সমাগম মোটামুটি থাকলেও বিক্রির পরিমান একদমই কম। এ বছর গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরু পালন ব্যাপক ব্যায়বহুল হয়ে গেছে। ফলে দুই মাস আগে থেকেই গরুর দাম বাড়তি। আর দাম বাড়তির কারনেই বিক্রি কম হচ্ছে। তবে আশা করছি সামনে হাটে বেচাকেনা একটু ভালো হবে।

উপজেলার সরাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোঃ আকুল হোসেন বলেন, আমার বাড়িতে পোষা দুইটি গরু নিয়ে এসেছি অরনকোলা হাটে। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে আজ থেকে স্বল্প পরিসরে জমতে শুরু করেছে এ হাট। হাটে ক্রেতা থাকলেও বেচাকেনা হচ্ছে না। যারা এসেছেন তারা যে দাম বলেন সেটায় পশু পালনের খরচও উঠবে না, লাভ তো পরের বিষয়।

কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা এলাকা থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, শুনেছি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পশুর হাট ঈশ্বরদী অরনকোলা। প্রত্যেক বছরই বেশ কয়েকটা হাট ঘুরে ঘুরে গরু ক্রয় করি। ঈদকে টার্গেট করে আজ থেকে অরনকোলা পশুর হাটে দেশি জাতের ছোট-বড় গরু আমদানি শুরু হয়েছে। মুলত হাটের পরিস্থিতি দেখার উদ্দেশ্যেই আজকে এসেছি। হাটে গরুর আমদানি প্রচুর তবে দাম চড়া। ৩৫ হাজার টাকা মন আইডিয়া করে গরু ক্রয় করতে হবে।

স্থানীয় ক্রেতা আরিফ বিশ্বাস বলেন, প্রত্যেক বছরই এই হাট থেকে কোরবানীর গরু ক্রয় করি। এবারও এসেছি গরু কিনতে তবে গরুর বাজার মুল্য এতই চড়া যে আমাদের বাজেট ফেল হয়ে যাচ্ছে। গত বছরও তুলনামুলক কম ছিল গরুর দাম। হাট ঘুরে যা বুঝলাম এ বছর আমাদের মত মধ্যবিত্তদের কোরবানির পশু ক্রয় একটু কঠিন ব্যাপার হয়ে যাবে। ৩ মন ওজনের একটি গরু কিনতে গেলে মিনিমাম এক লাখ টাকা দাম হাঁকছেন  বিক্রেতারা। সামনে হাটগুলো জমজমাট হলে আশা  করছি দাম একটু কমতেও পারে।

অরনকোলা পশুর হাট ইজারাদারদের একজন রুনু মন্ডল জানান, উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট আমাদের অরনকোলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয়। কোরবানীকে সামনে রেখে শুরু হওয়া হাটের প্রথম দিন আজ। হাটে গরু আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। সামনে হাটে আরো অনেক গরু আমদানি হবে। কোরবানির জন্য পশুর কোনো সংকট হবে না বলে আশাবাদী। তবে বাড়তি দামের কারনে বেচাকেনা একটু কম হচ্ছে।