ঈদে আনন্দে পর্যটকে মুখরিত ঈশ্বরদীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো
- ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:
- প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৭:২৬ PM , আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩, ০৭:৩২ PM

ঈশ্বরদীতে ঈদের আমেজ শহরে তেমন দেখা না গেলেও ঈদের পঞ্চম দিনে দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ছিল স্থানীয় পার্ক ও রিসোর্টগুলো। সাপ্তাহিক ছুটি বা ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের সমাগমে মুখর পাবনার ঈশ্বরদী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা ও লালন শাহ সেতুসহ স্থানীয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাচীন এ ঐতিহ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন। এখানকার প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। এক চীর পদ্মা নদীর বুকে যেন খোলা চর পড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে পাকশির এই দর্শনীয় স্থান। ঐতিহ্যর কাল ধরে রাখতে দাড়িয়ে আছে লাল রঙ্গা সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। চির যৌবনা এ হার্ডিঞ্জ ব্রীজ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশেই পদ্মা নদীর মাঝ দিয়ে সমান্তরাল ভাবে দাড়িঁয়ে আছে লালনশাহ সেতু। এটি দেশের তৃতীয় দীর্ঘতম সড়ক সেতু হিসেবে পরিচিত। পাকশি রেল ষ্টেশন উপর দাড়িয়ে প্রাকৃতিক এক সৌন্দর্য উপভোগ করা যাই এই দর্শনীয় স্থানে এসে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালনশাহ সেতুর কোল ঘেঁষেই নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্মাণাধীন রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুউচ্চ (৩০ তলার সমপরিমাণ উঁচু) চুল্লি ও উঁচু স্থাপনাগুলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু থেকে খুব সহজের অবলোকন করা যায়।
পদ্মার পাদদেশে নির্মাণাধীন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু মিলে ওই এলাকা যেন সৌন্দর্যের আধারে পরিণত হয়েছে। আর এ সৌন্দর্য উপভোগ করতেই ঈদের পঞ্চম দিনেও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। অস্থায়ী বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে দর্শনার্থীদের একমাত্র জায়গা পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকা, মনি পার্ক, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট, সন্জুখানের রিসোর্ট ও পদ্মা নদীর সাঁড়াঘাট এলাকায় ঈদের পঞ্চম দিনেও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। মোটরসাইকেল, রিক্সা-ভ্যান, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরিবারে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে মনের আনন্দে মেতেছেন সবাই।
ঈদের পঞ্চম দিন পাকশি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী শেখ মহসিন বলেন, পদ্মা নদী শুকিয়ে চর পড়ে গেছে আর উপরে প্রমত্তা শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাশেই লালনশাহ সেতু সব মিলিয়ে জায়গা টা বেশ সুন্দর লাগে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছি পাকশি। এর আগেও অনেকবার এসেছি। বেশ ভালো লাগার মত একটা জায়গা।
স্থানীয়রা জানান, পাকশির এই দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে ও পুরনো এই সেতু গুলো ঘুরে, পদ্মা নদীর পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে। যদি সরকারি ব্যাবস্থাপনায় একটা পর্যটন কেন্দ্র এখানে করে দেওয়া তবে এখানে আরো অনেক মানুষ আসতে পারবে প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
লালনশাহ সেতু পার করে দুপাশে ঝাওবাগান আর মাঝ দিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত সড়ক পার করেই যেতে হয় নতুনত্বের সমারোহ মনি পার্কে। ৫ একর জমির উপর পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এ পার্ক এখন ভ্রমন পিপাশুদের জন্য অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। ঈদের এ আনন্দে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ঘুরতে আসা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার একটি দর্শনীয় স্থান মনি পার্ক।
মনি পার্কের পরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, গত দুই বছর যাবত এ মনি পার্ক চালু করা হয়। প্রথম থেকেই পর্যটকদের ভালো কিছু দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছি। ঈদের আমেজে বৃষ্টির মধ্যেও আমাদের এখানে প্রায় দুই হাজারের মতো দর্শনার্থী যাওয়া-আসা করছেন। আশা করছি, পার্কের আরো কিছু উন্নয়ন কাজের পর আমরা আরও ভালো দর্শনার্থী পাব।
মনি পার্কে ঘুরতে আসা ঈশ্বরদী কলেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা ফারাবি সাকিব বলেন, ঈশ্বরদী একটি মফস্বল শহর। আর এ ছোট শহরে বিনোদন হিসাবে উপভোগ করার জন্য বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মনি পার্ক একটি। শুনেছি মনি পার্ক অনেক সুন্দর তাই আমি পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে এসেছি এ পার্কে। এখানকার পরিবেশ অনেক ভালো। ছোট পরিসরে তৈরি হওয়া এ পার্কে শিশু ও বড় উভয়ের জন্যই নির্দিষ্ট কিছু রাইড রয়েছে এছাড়াও পদ্মার তীরে চেয়ার দিয়ে বসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে যেখানে বসে অনেকক্ষণ সময় কাটানো যায়।
এদিকে, উপজেলার জয়নগর এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র। ঈদের দিন থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে রিসোর্টটি। ৬০ বিঘা জমির ওপর জয়নগর এলাকার বাসিন্দা মোঃ খাইরুল ইসলাম নামে এক সৌখিন ব্যবসায়ী নির্মাণ করেছেন এ বিনোদন কেন্দ্র।
তিনি জানান, আধুনিকায়ন ও পর্যটকদের রুচিসম্মত চাহিদার কথা ভেবেই এই রিসোর্টটি তৈরি করেছি। শুধু ঈদ নয়, বছরের অন্যান্য সময়েও এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে তবে দুই ঈদের ছুটিতে রিসোর্টে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রুশ নাগরিকদের কথা চিন্তা করে মানসম্মত খাবারের আধুনিক রেষ্টুরেন্ট, সুইমিংপুল, ছোট ও বড়দের জন্য নানা রকম রাইড ও পরিবার নিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বসে সময় কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে এছাড়াও দর্শনার্থীদের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে বিনোদনের জন্য প্রতিবছর রিসোর্টের ভিতরে নতুন নতুন আইটেম যোগ করা হচ্ছে।
রিসোর্টে ঘুরতে আসা দর্শণার্থী তুষার শেখ বলেন, বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করলে বোঝা যায়, ঈশ্বরদীতে এখন সত্যিকারের একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, যেখানে পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদে বেড়ানো যায়। এ পার্কের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। আর ঈদের সময় সাশ্রয় মুল্যে ঈদ স্পেশাল প্যাকেজ নিয়ে বেশ সুবিধা ভোগ করি। সব মিলিয়ে স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট বিনোদনের অন্যতম জায়গা বলে মনে হচ্ছে।
পাকশি এলাকার আরেকটি বিনোদন কেন্দ্র সঞ্জুখানের রিসোর্ট। এছাড়াও রয়েছে পদ্মার সাঁড়াঘাট এলাকা। এসব জায়গাতেও যেন দর্শণার্থীদের ভিড় ভরপুর ছিল